হায়দ্রাবাদ সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটিতে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে SFI সহ দলিত ছাত্র সংগঠনগুলির জোটের জয় তাৎপর্যপূর্ণ, কেন ?

                    সৌম্যশান্ত রিজওয়ান রক্ষিত 

সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটিগুলোতে শেষ ভালো ভাবে নির্বাচন হয়েছিল ২০১৯ সালে। তারপরে ক্যাম্পাস সহ সাধারণ মানুষের জীবনে সর্বত্র নেমে আসে করোনার প্রকোপ। বন্ধ হয়ে যায় ক্যাম্পাস।

২১ পরবর্তী কেরালা, আসাম, বিহারের ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্র সংসদ সংগঠিত করে রাজ্য সরকারগুলি।

কেরালাতে সরকারই পরিচালনা করছে LDF। বর্তমান বিহারেও বামেরা সরকারের অংশ, এমনকী শেষ আসাম বিধানসভা নির্বাচনে বিধায়ক হিসাবে সিপিআইএম-এর যেহেতু জনপ্রতিনিধি আছে সেক্ষেত্রে এই জায়গার স্থানীয় কলেজ ইউনিভার্সিটি গুলোতে ভারতের ছাত্র ফেডারেশন বা অন্যান্য বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলি যে কমবেশি ভালো ফলাফল করবে নির্বাচনে সেটাই স্বভাবিক।

হায়দ্রাবাদ সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির নির্বাচন, ২০২৩-এর প্রথম সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির নির্বাচন ছিল। করোনা পরবর্তী সময়ে দ্বিতীয় সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির নির্বাচন। এর আগে করোনা পরবর্তী সময়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হয়েছে কেরালা মহাত্মা গান্ধী সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটিতে, যেখানে ভারতের ছাত্র ফেডারেশন বিপুল ভাবে জয়লাভ করেছিল।

তাহলে হায়দ্রাবাদ সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির ছাত্র সংসদ নির্বাচন ও তার ফলাফল কেন গুরুত্বপূর্ণ।

প্রথমেই বুঝতে হবে এই নির্বাচন প্রক্রিয়া ছিল আকস্মিক। অর্থাৎ ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মুখোমুখি হওয়ার কোনো মানসিক পরিকল্পনা ক্যাম্পাসের মধ্যে ছাত্র ছাত্রীদের ছিল না। এবং শেষ নির্বাচনে যেখানে SFI নেতৃত্বাধীন ছাত্রজোট জয়ী হয়েছিল, কেন্দ্র কখনই চাইবে না যে একটি সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির ছাত্র সংসদের ক্ষমতায় বামপন্থীরা পুনরায় জিতুক। এবং তার জন্য যাবতীয় ক্যাম্পাস সংলগ্ন সর্বত্র গেরুয়া পতাকা হাতে ABVP বাহিনী প্রস্তুত ছিল।

কিন্তু হায়দ্রাবাদ সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির  নির্বাচন ও ফলাফল কিছু অন্য ইতিহাসেরই অপেক্ষায় ছিল তা বলা বাহুল্য। 

হায়দ্রাবাদ সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির এই ছাত্র সংসদ নির্বাচন ছিল ত্রিমুখী।

বামপন্থী ও দলিত সংগঠনগুলি এই নির্বাচনে একত্রিত হয়, জোট হয় ভারতের ছাত্র ফেডারেশন, আম্বেদকর স্টুডেন্টস এসোসিয়েশন ও দলিত স্টুডেন্টস ইউনিয়ের মধ্যে।

তাদেরকে পরাস্ত করতে অর্থ ও বাহুবল নিয়ে কোমর বেঁধে নাম এবিভিপি – সেবালাল বিদ্যার্থী পরিষদের জোট।

এছাড়া জোট করে কংগ্রেসের ছাত্র উইং NSUI , মুসলিম স্টুডেন্টস ফেডারেশন ও অন্যান্য ছোট কিছু ছাত্র সংগঠন।

অর্থাৎ জোট থেকে স্পষ্ট, গেরুয়া বিরোধী ভোট ক্যাম্পাসের মধ্যে ১০০% একত্রিত কোনো ভাবেই ছিল না।

কিন্তু প্রথমেই প্রার্থীতালিকা ঘোষণায় ইতিহাস সৃষ্টি করে SFI – ASA – DSU জোট।

প্রার্থীতালিকা ঘোষণার পর দেখা যায় সেন্ট্রাল প্যানেলের ৯ টি আসনের প্রার্থীদের মধ্যে SFI -ASA -DSU জোটের প্রার্থী তালিকায় ৬ জন দলিত, যাঁদের মধ্যে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী একজন কুয়ের কমিউনিটি থেকে প্রতিনিধিত্ব করেন এবং অন্যজন ট্রান্স মহিলা। তাছাড়াও প্যানেলে ছিলেন একজন আদিবাসী মহিলা।

অস্বীকার করার জায়গা নেই SFI – ASA – DSU জোট যে প্যানেল নিয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের লড়াইয়ে গেছিল, তা ঐতিহাসিক।

নির্বাচন প্রক্রিয়া চলাকালীন গেরুয়াবাহিনীর গুন্ডামো থেকে যদিও বাঁচেনি হায়দ্রাবাদ সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস। নির্বাচন পরবর্তী সময়ে SFI – ASA – DSU ছাত্র জোটের উপ নেমে আসে আক্রমণ। কিন্তু ক্যাম্পাসের ছাত্রছাত্রীদের প্রতিরোধ শক্তি আক্রমণের থেকে বেশি শক্তিশালী হওয়ায় পিছু হঠতে হয় গেরুয়া বাহিনীকে। 

নির্বাচনে ৭৬% ছাত্রছাত্রী তাদের গণতান্ত্রিক মতামত প্রদান করেন। এবং গত ২৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের ফলাফল বেরোনোর পর দেখা যায় সেন্ট্রাল প্যানেলের ৯ আসনেই জয়লাভ করেছে SFI – ASA – DSU বামপন্থী প্রগতিশীল ছাত্র জোট।

প্রেসিডেন্ট পদে জয়লাভ করেছেন দলিত কুয়ের কমিউনিটির প্রজ্বল গাইকোয়াড, যিনি ASA ছাত্র সংগঠনের সাথে যুক্ত।

জেনারেল সেক্রেটারি পদে রেকর্ড মার্জিনে জয়ী হয়েছেন কৃপা মারিয়া জর্জ, যিনি SFI এর সাথে যুক্ত।

প্রত্যেক পদেই বামপন্থী প্রগতিশীল ছাত্রজোটের জয়ের মার্জিন গড় ৭০০ ভোটের, যা একটি ক্যাম্পাসের নির্বাচনে সুবিশাল।

ফলাফল শুধু এটা বলছে না যে হায়দ্রাবাদ সেন্ট্রাল ইনিউভার্সিটির নির্বাচনে SFI – ASA – DSU ছাত্রজোট জয়লাভ করেছে। এই ফলাফল এই কারণে আরও বেশি তাৎপর্যপূর্ণ কারণ বিজেপি বিরোধী ভোট যেখানে একত্রিত নয়, যেখানে কম বেশি গোটা দেশের নানা জায়গা থেকে ছাত্র ছাত্রীদের উপস্থিতি আছে সেখানে সংখ্যা গরিষ্ঠ ছাত্র ছাত্রী আজকের দিনে দাঁড়িয়েও গেরুয়া রাজনীতিকে রাজনৈতিক ও নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় প্রতিহত করেছে।

যে ক্যাম্পাস সাথী রোহিত ভেমুলার অকালে চলে যাওয়াকে এখনও ভুলতে পারেনি – সেই ক্যাম্পাস কিন্তু আবারও দাঙ্গাবাজ গেরুয়াবাহিনীকে রুখে দিতে সক্ষম।

সক্ষম এটা প্রতিষ্ঠিত করতে নীলের সাথে মিশলে লাল, রাজনৈতিক ভাবে সত্যিই পাল্টে যায় দিনকাল।

একটি রাজনৈতিক চেতনাসম্পন্ন ক্যাম্পাস যে ফলাফল ২০২৩ এর শুরু তে দেখালো – গোটা দেশ তার প্রতিফলন কতটা দেখতে পারবে, সেটা হয়তো সময় বলবে। কিন্তু এই নির্বাচনের রাজনৈতিক প্রভাব যে সুদূরপ্রসারী তাতে কোনও সন্দেহের অবকাশ নেই।