১৮৯৭ সালের ২৩ শে জানুয়ারি এক সূর্যোদয়ের কাহিনী , যে কাহিনীতে দেশের ঐক্যবদ্ধ এক স্বপ্নের বাস্তবায়ন ধর্মের চাদরে নয় ধর্ম নিরপেক্ষতার রাজপথে দেশের মুক্তির স্বাদ।সবার নেতাজি হয়ে ওঠা সুভাষ চন্দ্র বোসের ভূমিষ্ঠ হওয়ার সাথে দেশের মুক্তির সংগ্রামের ইতিহাসে সোনার অক্ষরে লেখা শুরু হয় আপোষহীন এক সংগ্রামের কাহিনী ও তার জয়গান।প্রতিবছর এই দিনটি দেশপ্রেম দিবসের ভাবনা হয়ে রাজনীতির অলিন্দে হারিয়ে যাওয়া বার বার নেতাজির ভাবনা বাধাপ্রাপ্ত হয়েছে তার প্রসারের ক্ষেত্রে।তবু নির্দ্বিধায় বলা যায় সূর্যোদয়ের আলোর শিখায় সর্বদা উজ্জলমান।কেননা নেতাজির জন্মদিন পালিত হলেও তার মৃত্যুদিন পালন হয় না কারণ সেই দিনটি কারোর জানা নেই।

দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার লড়াইয়ের পাশে নেতাজি মনে করতেন দেশের ঐক্য সুদৃঢ় করতে হবে তবে ই দেশের মুক্তির সংগ্রামে কাঙ্খিত স্বাদ অনুভব করতে পারবে দেশের মানুষ।নেতাজির ব্যক্তিত্বে এমন এক ছাপ কংগ্রেসের তৎকালীন জাতীয় অধিবেশনে ১৯৩৯ সালে প্রথম বাঙালি হিসেবে কংরসের সভাপতি নির্বাচিত হন।এমনি এক করিশমায় ভরপুর ছিলেন কংগ্রেসের নেতৃত্বের কাছে তিনি বেশ জনপ্রিয় যার জেরে চক্ষুশূল হয়েছিলেন কিছু মানুষের কাছে।তিনি কংগ্রেসের অহিংসা নীতি ও অসহযোগ আন্দোলনের পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন , তিনি বলেন দেশের মুক্তির সংগ্রাম তার কাঙ্খিত স্তরে পৌঁছাতে রক্তের বলিদান প্রয়োজন অনুরোধ উপরোধে নয়।স্বাভাবিক ভাবেই মতান্তর হওয়ায় তিনি পিছন ফিরে তাকাননি।

যদিও শেষ মেষ তাকে কংগ্রেসের অভ্যন্তরে নীতি পরিবর্তনের লড়াইয়ে নামেন ইস্তফা দিতে হয় সভাপতির পদ থেকে তবু তিনি থেমে থাকেন নি।  ১৯৩৯ সালের ২২ জুন বসু ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের অভ্যন্তরে নিখিল ভারত ফরওয়ার্ড ব্লক সংগঠিত করেন মূলত বামপন্থী রাজনৈতিকদের মজবুত করার লক্ষ্যে কিন্তু এর প্রধান শক্তি ছিল তার নিজের রাজ্য বাংলায়। শুরু থেকে সুভাষচন্দ্রের একনিষ্ঠ সমর্থক, মুথুরামালিঙ্গম থেভার ফরওয়ার্ড ব্লকে যোগ দেন। একই বছরের ৬ সেপ্টেম্বর বসু যখন মাদুরাই গিয়েছিলেন তখন তার অভ্যর্থনার উদ্দেশ্যে মুথুরামালিঙ্গম একটি বিশাল র‍্যালির আয়োজন করেন।

তারপর শুধুই সংগ্রামের রাজপথে এক বলিষ্ঠ প্রতিরূপ আপোষ হীন সংগ্রামে।ইংল্যান্ডে তিনি ব্রিটিশ লেবার পার্টির বিভিন্ন নেতা ও রাজনৈতিক চিন্তাবিদ যেমন লর্ড আরউইন, জর্জ ল্যান্সবারি, ক্লিমেন্ট এটলি, আর্থার গ্রীনউড, হ্যারল্ড লাস্কি, জে বি এস হ্যালডেন, আইভর জেনিংস, গিলবার্ট মারে, জর্জ ডগলাস হাওয়ার্ড কোল, স্ট্যাফোর্ড ক্রিপস‌ ইত্যাদির সঙ্গে ভারতের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে মত বিনিময় করেন।

তিনি বিশ্বাস করতে শুরু করেন যে, স্বাধীন ভারতের অন্তত দুই দশক পর্যন্ত তুরস্কের কামাল আতাতুর্কের অনুরূপ সমাজতান্ত্রিক একনায়কতন্ত্র প্রয়োজন। আঙ্কারায় আতাতুর্কের সাথে তাঁর দেখা করার অনুমতি ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ রাজনৈতিক কারণে প্রত্যাখ্যান করে। ইংল্যান্ডে তাঁর সফরের সময় সুভাষচন্দ্র বেশ কয়েকজন রাজনীতিবিদের সাথে সাক্ষাতের চেষ্টা করেন, কিন্তু শুধুমাত্র লেবার পার্টি এবং উদারনৈতিক রাজনীতিবিদরা তার সাথে সাক্ষাৎ করতে সম্মত হন।

দেশের মুক্তির সংগ্রামে সোভিয়েতের সাহায্য চেয়ে যোগাযোগ করতে চেয়েছিলেন ব্যর্থ হন , একপ্রকার বাধ্য হয়েই নাৎসি জার্মানির সাহায্য প্রার্থী হন।যদিও সিঙ্গাপুরে জয় পেলেও জার্মানির পরাজয়ে জাপানের পতন সেই সঙ্গে নেতাজির স্বপ্নের পতন ও ঘটে।

তবু তার ভাবনা আদর্শ দেশের ধর্মনিরপেক্ষতা ও ঐক্যবদ্ধ ভারতের ভাবনা আজও সমানভাবে অনুভূত।তাই দেশের স্বাধীনতার বহু বছর পরেও দেশের বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য সেই সঙ্গে বহুত্ববাদকে রক্ষা করতে কংগ্রেসকে ভারত জোরো যাত্রা করতে হয়।তাই জন্মদিবসে অঙ্গীকার এটাই দেশবাসী হিসেবে দেশপ্রেম দিবসের পাশাপাশি এক সংবেদনশীল ভারতীয় হয়ে ওঠার প্রচেষ্টা থাকুক অনুশাসনে ও আদর্শে বলীয়ান হয়ে।