
সুহৃদ দত্ত চলে গেলেন। হুগলি জেলার প্রবীণ সিপিআই(এম) নেতা সুহৃদ দত্ত। দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন। সিঙ্গুরে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতৃত্বে শিল্পবিরোধী ধ্বংসাত্মক আন্দোলনের সময় তাপসী মালিকের মৃত্যুর জন্য তাঁকে অভিযুক্ত করে কারারুদ্ধ করে তদন্তের নামে যে ভয়ঙ্কর অত্যাচার চালানো হয়েছিল তার ফলেই নানাবিধ শারীরিক সমস্যা দেখা দিয়েছিল। কোন অভিযোগ প্রমাণ করা যায় নি সুহৃদ দত্তের বিরুদ্ধে কিন্তু সিবিআই হেফাজতে থাকাকালীন অত্যাচারের কারণে তিনি শয্যাশায়ী হয়ে পড়েছিলেন। তবুও যতদিন হাঁটতে পারতেন,চেষ্টা করতেন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে হাজির থাকতে। শেষে বিছানার সঙ্গে মিশে গিয়েছিল প্রবীণ কমিউনিস্ট নেতার শীর্ণ হয়ে যাওয়া শরীর। সব যন্ত্রণার অবসাদ ঘটল ৯ ই নভেম্বর। সিঙ্গুরে শিল্পের জন্য জমি দেওয়ার জন্য জমির মালিক কৃষকদের সম্মত করানোর ক্ষেত্রে বড়ো ভূমিকা নিয়েছিলেন তিনি। পার্টি প্রথম থেকেই তাঁর পাশে ছিল। মামলা চালানোর জন্য বিশেষ তহবিল গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল সিপিআই(এম) এর পক্ষ থেকে।
কিন্তু প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির ষড়যন্ত্রের ইতিহাস রয়ে গেল,যে ষড়যন্ত্রের কারণে সিঙ্গুরে মোটরগাড়ির কারখানা ৮০ শতাংশ তৈরি হয়েও পরিত্যক্ত হয়েছিল, তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বৃহৎ পুঁজি নিয়ন্ত্রিত গণমাধ্যম সেই সময় সিঙ্গুরে মোটরগাড়ির কারখানার প্রকল্প বাতিল করার জন্য নানা মিথ্যা কাহিনী প্রচার করেছিল যার মধ্যে অন্যতম ২০০৬ সালের ডিসেম্বর মাসে তাপসী মালিক নামে এক তরুণীর অস্বাভাবিক মৃত্যুর দায় সিপিআই€এম) নেতা সুহৃদ দত্তের ঘাড়ে চাপানো। বলা হয়েছিল ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে সিঙ্গুরের বেড়াবেড়ির বাসিন্দা তাপসী মালিককে। এইভাবে শুধু খুনির মিথ্যা তকমাই নয়, লড়াকু কমিউনিস্ট নেতার চরিত্রহননের চেষ্টা করেছিল বিশেষত আনন্দবাজার পত্রিকা। তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন সাংসদ গায়ক কবীর সুমন তো বই ছাপিয়েছিলেন “নিশানের নাম তাপসী মালিক” নামে। মৃত তরুণীর অর্ধদগ্ধ দেহের ছবির বড়ো বড়ো পোস্টার ফ্লেক্স হোর্ডিং ছাপিয়ে কুৎসিত প্রচার চালানো হলেও প্রকৃত খুনি ধরা পড়েনি। ২ মাস ১৯ দিন সিবিআই হেফাজতে বন্দী ছিলেন সুহৃদ দত্ত প্রমাণাের অভাবে ছাড়া পেয়ে যান তিনি। তাপসী মালিকের বাবা মনোরঞ্জন মালিক যিনি রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য,বেচারাম মান্নার পাশাপাশি সিঙ্গুরে শিল্পবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মুখ ছিলেন,পরবর্তীকালে ভরা তৃণমূল জমানায় নিজের মেয়ের মৃত্যুর জন্য তৃণমূল কংগ্রেসকেই দায়ী করে তিনি ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন। চাপের মুখে অবশ্য কিছূদিনের মধ্যেই ডিগবাজি খেয়েছিলেন মেয়ের মৃত্যু নিয়ে রাজনৈতিক ধান্দায় নেমে পড়া এই তথাকথিত “অনিচ্ছুক কৃষক”-!
অভিযোগ তদন্তের নামে সুহৃদ দত্তের উপর কোনো অনৈতিকভাবে ট্রুথ সিরামের নামে রাসায়নিকের প্রয়োগ করা হলে তার সারা শরীরে সেই রাসায়নিকের বিষাক্ত প্রভাবে নানারকম চর্ম ও স্নায়ুঘটিত রোগের ভয়াবহ সংক্রমণ হয়, এবং তিনি প্রায় অথর্ব হয়ে পড়েন। কিন্তু হাজার চেষ্টা করেও তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের প্রমাণ পাওয়া যায় নি। চন্দননগর ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টৈ অস্বাভাবিক দ্রুত শুনানির শেষে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের শাস্তি ঘোষণা করা হলেও হাইকোর্টে জামিন পেয়ে যান সুহৃদ দত্ত।
সম্মতি না নিয়েই সিবিআই তাঁর নারকো অ্যানালিসিস টেস্ট করায়। তাঁকে যে ড্রাগ ইনজেক্ট করা হয় তাতে টেস্টের পরের দিন থেকেই তার শরীরে ঘা শুরু হয়। ধীরে ধীরে সেই ঘা ছড়িয়ে পড়ে যা আজও তিনি বহন করে নিয়ে চলেছেন। বর্তমানে বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া এই নারকো টেস্ট নিষিদ্ধ।
ময়না তদন্তের রিপোর্টে তাপসী মালিকের যৌনাঙ্গে শুক্রানু বা সেমিনাল তরল পাওয়া যায়নি। তবে মৃত্যুর কিছুদিন আগে তার গর্ভপাত হয়েছিল বলে জানা যায়? তাহলে কে কেন মারলো তাপসীকে? তদন্তের ফলাফলে কিছুই উঠে আসেনি।