![](https://www.leftsquad.in/wp-content/uploads/2022/11/ak-4-1024x512.jpg)
তবুও নিশ্চিতভাবে বৃহৎ গণমাধ্যম বলতে পারেনি ক্যানিংয়ের একটি সরকারি স্কুলের শিক্ষক সৌরভ বৈদ্যের চাকরি হাইকোর্টের নির্দেশে চলে যাওয়ার কারণেই আত্মহত্যা করেছেন। অথচ সোনারপুরের বাসিন্দা সৌরভ বৈদ্য গত ২০১৯ সাল থেকে শিক্ষকতার চাকরি করতেন। সম্প্রতি বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের নির্দেশে অনৈতিকভাবে চাকরি পাওয়া ২৬৯ জনের চাকরি চলে যায়। বরখাস্ত হয়েছিলেন ইতিহাসে র শিক্ষক সৌরভ বৈদ্য। তারপরই মাত্র একবছর আগে বিবাহিত জীবন শুরু করা সৌরভ আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। সুইসাইড নোটে তিনি লিখে গেছেন,” আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়।” কিন্তু পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, বেআইনিভাবে শিক্ষকতার চাকরি প্রাপকদের তালিকায় নিজের নাম থাকার কারণেই অপমানিত হওয়ার আশঙ্কায় আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সৌরভ। অধিকাংশ বড়ো পত্রপত্রিকা এড়িয়ে গেছে খবরটি। কিন্তু সত্য চাপা থাকেনি। দ্বিতীয় আত্মহত্যার খবরটি নিয়ে অবশ্য উত্তাল হয়েছে বিরোধী রাজনীতি। মুর্শিদাবাদের লালগোলায় সারপাখিয়ার যুবক আব্দুর রহমান শিক্ষকতার চাকরি পাওয়ার জন্য সাত লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন কান্দির বাসিন্দা দিবাকর কোনাইয়ের হাতে। টাকা দিয়েও চাকরি না পাওয়ার হতাশায় আব্দুর রহমান গত ২৭শে সেপ্টেম্বর আত্মহত্যা করেন। সুইসাইড নোটে তিনি টাকা দিয়েও চাকরি না পাওয়ার কথা লিখে যাওয়ার ফলে তাঁর পরিবারের সদস্যরা লালগোলা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। যে অভিযোগের ভিত্তিতে এ যাবৎ মূল অভিযুক্ত দিবাকর কোনাই সহ রেহশান শেখ ও প্রজানন সরকারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কিন্তু এই দুঃখজনক ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ যোগাযোগ থাকলেও দিবাকর কোনাইদের পিছনে কারা রয়েছে অর্থের বিনিময়ে বেআইনি নিয়োগের প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা যুক্ত রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এবং বেআইনি নিয়োগ বন্ধ করার দাবি নিয়ে গত ২৯শে অক্টোবর লালগোলা থানায় ডেপুটেশন দিতে গিয়ে পুলিশি বাধার সম্মুখীন হন ভারতের গণতান্ত্রিক যুব ফেডারেশনের কর্মীরা। বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছিল লালগোলা থানা চত্বর।
প্রসঙ্গত, গতমাসে হাইকোর্টে সিবিআইয়ের তরফে একটি রিপোর্ট পেশ করা হয় । সেখানে জানানো হয়েছে, স্কুলে নিয়োগের ক্ষেত্রে নবম-দশম ও একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি এবং গ্রুপ-সি ও গ্রুপ-ডি পর্যায়ে চাকরিতে মেধাতালিকায় এমন 8 হাজার জনের নাম রয়েছে, যাঁরা একটি বা দু’টি প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন কিংবা সাদা খাতা জমা দিয়েছেন ।
![](https://www.leftsquad.in/wp-content/uploads/2022/11/311001461_460226436200983_1804459235047909846_n-1024x576.jpg)
এই আট হাজারের মধ্যে কারা সুপারিশপত্র এবং নিয়োগপত্র পেয়েছেন তাঁদের তালিকা তৈরি করতে নির্দেশ দেন বিচারপতি । সিবিআই রিপোর্টে বলা হয়েছে , নবম-দশমে ৯৫২জন, একাদশ-দ্বাদশে ৯০৭ জন, গ্রুপ-সি ৩৪৮১ জন এবং গ্রুপ-ডি পর্যায়ে ২৮২৩জন ওএমআর জালিয়াতির মাধ্যমে চাকরি পেয়েছেন । সব মিলিয়ে সংখ্যাটা ৮ হাজারের বেশি । প্রাপ্য নিয়োগ থেকে বঞ্চিত যোগ্য প্রার্থীরা প্রায় ৫৯৮দিন যাবৎ কলকাতার ধর্মতলায় অবস্থানে বসে আছেন। যাঁদের উদ্দেশ্যে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেছেন,” আন্দোলন করলেই চাকরি হবে না,চাকরি হবে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে ।” এই ব্রাত্য বসুর একটি ভিডিও প্রচারিত হয়ে গিয়েছিল,যে ভাষণে তিনি দলীয় কর্মীদের বলছেন”,তৃণমূল করলেই চাকরি দেওয়া হবে,কোথায় কিভাবে দেওয়া হবে তা জানতে চাইবেন না!” এহেন মন্ত্রী মশাই এখন অবস্থান বিক্ষোভরত যোগ্য প্রার্থীদের মেধা ও যোগ্যতার কথা মনে করাচ্ছেন কেন? উত্তর স্পষ্ট। টাকার বিনিময়ে চাকরি যাদের কাছে বিক্রি করা হয়েছে তাঁদের এখন চাকরি ছাড়তে বলার হিম্মত নেই সরকারের। কারণ চাকরি বেচা টাকা কত হাত ঘুরে শেষে কার হাতে পৌঁছেছে সরকারের মাথায় যাঁরা আছেন তাঁরা জানেন। ব্রাত্য বসু তো জানেনই। তবুও তাঁকে “উইঙ্কল টুইঙ্কল” নাটকের হঠাৎ জেগে ওঠা বৃদ্ধের চরিত্রে অভিনয় করতে হচ্ছে। তাঁকে এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের শিক্ষা দপ্তরকে সবচেয়ে বেশি বিপদে ফেলেছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের একটি স্বীকারোক্তি।
![](https://www.leftsquad.in/wp-content/uploads/2022/11/311368746_5848865071811626_683866641679883106_n-1024x576.jpg)
হাইকোর্টে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাসে পর্ষদ স্বীকার করেছে তারা ২০১৪ র টেট পরীক্ষার্থীদের ওএমআর শিট নষ্ট করে ফেলেছে। এবং এই নষ্ট করার প্রক্রিয়াটি নিতান্তই আকস্মিকভাবে নয়, করা হয়েছে একটি সংস্থার সাহায্য নিয়ে। ফলে চাইলেও ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষার্থীদের প্রাপ্ত নম্বরসহ মেধা তালিকা প্রকাশ করা সম্ভব হবে না। এরই পাশাপাশি বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের একটি নির্দেশ আরও পিছু হটতে বাধ্য করেছে সরকারকে। দুর্নীতির ফলে বঞ্চিত নিয়োগ না হওয়া যোগ্য প্রার্থীদের নির্ধারিত বয়স অতিক্রম করে গেলেও বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছেন, সেই কারণ দেখিয়ে তাঁদের সুযোগের আওতার বাইরে রাখা যাবে না,কারণ পর্ষদের ভুলেই তাঁদের সময় নষ্ট হয়েছে।
![](https://www.leftsquad.in/wp-content/uploads/2022/11/313411463_668124088231589_7871992370237737477_n.jpg)
ভাঁড়ার তলানিতে! তাই খরচের ভয়ে সরকারের পক্ষ থেকে শূন্য পদের সংখ্যা যথাযথভাবে প্রকাশ করা হচ্ছে না। নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হচ্ছে অনেক কম সংখ্যক পদের উল্লেখ করে। কিন্তু শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে এই নীতিতে বিপদ আরও বাড়ছে। আদালতের পর্যবেক্ষণ দেখিয়ে বঞ্চিত নিয়োগ প্রার্থীরা বলছেন নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার আগেই নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি জারি করা হচ্ছে কিভাবে? পুরোন শূন্য পদ নতুন নিয়োগের বিজ্ঞপ্তিতে যুক্ত করা হলে তো দুর্নীতির ফলে বঞ্চিত যোগ্য প্রার্থীরা বঞ্চিতই থেকে যাবেন। আমরা আরেকটু এগিয়ে প্রশ্ন করছি, নতুন নিয়োগের এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে রাজ্য সরকার দুর্নীতিগ্রস্ত অযোগ্য শিক্ষকদের পাশে থাকার বার্তা দিচ্ছেন কি? দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রীর “জিরো টলারেন্স” এখন হাসির খোরাক হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
![](https://www.leftsquad.in/wp-content/uploads/2022/11/305629956_460226342867659_7081144484063612690_n-1024x576.jpg)