১৯২৯ সালের ১০ জানুয়ারি বেলজিয়ান লেখক হার্জ এঁর কলমে যখন টিনটিনের আত্মপ্রকাশ হচ্ছে, ” Tintin in the Land of Soviet ” গল্পে – পারতপক্ষে বলাই যায় এই গল্প সম্পূর্ণ ভাবে ডিমিন করেছে কমিউনিস্টদের। ফ্রেঞ্চ সাংবাদিক টিনটিন সোভিয়েতদের চোখে সেখানে বুর্জোয়া এবং সোভিয়েতে তাঁর আগমন হচ্ছে সোভিয়েতের, নানা লেখকের মতে কালো দিক উন্মোচনের জন্য । কমিকসের চাদরে সবরকম ভাবে সোভিয়েত ও কমিউনিস্ট বিরোধী কন্টেন্ট রয়েছে এই গল্পে, আর এমন ভাবেই সেই কন্টেন্ট সাজানো যাতে তা প্রোপাগান্ডা স্বরূপ কমিউনিস্ট বিরোধী মানসিকতা তৈরী করে প্রভাবিত করতে পারে তৎকালীন পাঠকদের।

১৯৮৮ সালে ব্রিটিশ লেখক জে ড্যানিয়েল্স, টিনটিন এর মূল স্রষ্টা হারজ এঁর কিছু মূল চরিত্র এবং তৎকালীন ইংল্যান্ড এর নানা সামাজিক প্লট কে একত্রিত করে লিখে ফেলেন, “The Adventure of Tintin – Breaking Free”। এট্যাক ইন্টারন্যাশনালের তরফ থেকে পরবর্তীতে ১৯৯৯ সালেও দ্বিতীয় এডিশন প্রকাশ করা হয়। তবে লেখকের জে ড্যানিয়েল্স ছিল সম্পূর্ণ ছদ্মনাম।  এবং এই ছদ্মনাম নেওয়া প্রখ্যাত সুরা কম্পানির নাম থেকে যাতে কোনো ভাবে কপিরাইটজনিত সমস্যা এড়ানো যায়।

এই গল্পে টিনটিন তাঁর চাকরি হারিয়েছে, তার কারণ হল বসের নাকে তাঁর একটি অসাধারণ পাঞ্চ। এরপর নতুন কাজের খোঁজে ক্যাপ্টেন এর কাছে এসে সে অনুধাবন করছে ধীরে ধীরে সেই জায়গার শ্রমিকশ্রেণী কতটা রেসিজম, বস্তি উচ্ছেদ ও অন্যান্য নানা নিপীড়নের শিকার। এই শোষণ কে রুখে দিতেই একটা সময় শ্রমিকরা একত্রিত হয়ে শুরু করল ধর্মঘট, জন্ম নিল এক শ্রেণী সংগ্রাম যা ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ল গোটা দেশে।  রাষ্ট্র ধৰ্মঘট সমর্থকারীদের দমন করার চেষ্টা করলে বহু জায়গায় মুভমেন্ট বলশেভিক আন্দোলনের রূপ নেয়, এমনই সময় মিথ্যে মামলায় গ্রেফতার করা হয় ক্যাপ্টেন হ্যাডককে।

আন্দোলন যখন দেশব্যাপী বিপুল আকার নিচ্ছে রাষ্ট্র ও সরকার ভয় পায়, লিভারপুল ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে গোলটেবিল বৈঠকের মাধ্যমে ধীরে ধীরে মেনে নেওয়া শুরু হয় শ্রমিকশ্রেণীর দাবি।

গল্পের একদম প্রাথমিক স্তরে মনে হতে পারে শুধুমাত্র কিছু শপথ বা সহিংস ঘটনাকে গ্রাফিক্স এর মধ্যে দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে কিন্তু গল্প যত এগিয়েছে তত ট্রেড ইউনিয়ন, ইউনিয়নে নেতৃত্ব, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দ্বারা শ্রমিক শ্রেণীর নিপীড়নের উপর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে শুরু করে মূল গল্প।  এবং প্রতিক্রিয়া স্বরূপ উঠে আসে ধর্মঘট, সমাবেশের মত রাজনৈতিক ঘটনার উল্লেখ।  এই গ্রাফিক উপন্যাসের সাধারণ রাজনীতি উগ্র বাম-কমিউনিজম, সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও বিদ্রোহের প্রচার, সেইসাথে শ্রমিক-শ্রেণীর সম্প্রদায়কে বিভিন্ন উপায়ে সমর্থন করেছে।  হোমোফোবিয়া বিরোধী এবং বৈষম্যের বিরোধী শক্তিশালী বার্তাও রয়েছে, যতক্ষণ না কেউ মূল  “মনিব” বা অন্যথায় নিপীড়নের কর্পোরেট ব্যবস্থার অংশ নন।  এই উপন্যাস সম্পূর্ণ ভাবে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের উপর রচিত।  টিনটিন যদি কারও প্রিয় চরিত্রগুলির মধ্যে একটি হয় এবং তিনি যদি টিনটিন চরিত্রকে কোনো একটি লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিতে দেখতে চান।  এই গল্প তাঁর কাছে হয়ে উঠবে মূল্যবান, বিশেষত তাঁদের কাছে যাঁরা কমিউনিস্ট বিচারাধারার সাথে সহমত পোষন করেন।

গল্পের শেষ পাতায় ফিচার হিসাবে দেখা যাচ্ছে টিনটিন মুষ্টিবদ্ধ ভাবে এসাল্ট রাইফেল উঁচিয়ে আছে দৃপ্ত ভাবে, নীচে লেখা –  ” It’s not the end but just the beginning. “

টিনটিন চরিত্রের জন্ম দেওয়ার জন্য হার্জ আমার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন, তাঁর রাজনৈতিক চিন্তা যেমনই হোক না কেন, কিন্তু শ্রমিক শ্রেণীর স্বার্থে, ক্লাস স্ট্রাগল এর পার্ট এবং বলসেভিক মুভমেন্টকে লিড করা টিনটিন আমার কাছে প্ৰিয় হয়ে থাকবে সব সময়।

১০ জানুয়ারি, ২০২৩, টিনটিন ও স্নোয়ীর ( বাঙালি যাকে ভালোবেসে কুট্টুস ডাকে ) ৯৩-তম জন্মদিন