ওরা ভয় পেয়েছে। মানুষের প্রতিরোধে ওরা আজ দিশাহারা। বিশেষ করে লাল ঝাণ্ডার সমাবেশে উত্তোরত্তর জনজোয়ার হচ্ছে।বাড়ছে মানুষের প্রতিরোধও। নাছোড়বান্দা আন্দোলনের তীব্রতা আরও শানিত হচ্ছে।একের পর এক সমবায় সমিতির নির্বাচনে বামপন্থীরা জিতছে।পাশাপাশি  মানুষ ঠোকে শিখে তাঁর অভিজ্ঞতায় ভয়ভীতি কাটিয়ে রাস্তায় নামছে।তার পর আছে উচ্চন্যায়ালয়ের রাজ্য সরকারের প্রতি অনাস্থা এবং তিরস্কার। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় সহ অন্যান্য দপ্তরে নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় একের পর এক হার, রাজ্য সরকারকে   পর্যূদস্ত করে তুলছে। বিভাজনের রাজনীতি, সীমাহীন দুর্নীতি,লুঠ, ধর্ষণ, নারী পাচার, খুন নিত্যদিনের ঘটনায় চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি রাজ্যে বিরাজমান।সরকার আছে বলে মনেই হয় না। রাজনীতির অভিমুখ দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। তার জন্যই তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত রাজ্য সরকার নির্দিষ্ট সময়ে পঞ্চায়েত নির্বাচন করল না।কবে হবে পিসি -ভাইপো ছাড়া কেউ জানে না।আদৌ নির্বাচন হবে কিনা এ নিয়েও মানুষের মধ্যে সংশয় হচ্ছে।আর তার জন্যই মিছিল, মিটিং থেকে দাবি উঠতে শুরু করেছে ,অবিলম্বে পঞ্চায়েত নির্বাচনের দিন ঘোষণা করতে হবে, পুলিশকে দল দাস হয়ে কাজ করা চলবে না,অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে। রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে তার স্বাধীন সত্তা নিয়ে নির্বাচন পরিচালনা করতে হবে। রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে  রাজ্য সরকারের লেজুরবৃত্তি করা থেকে বিরত থাকতে হবে। মানুষ যখন এই আওয়াজ তুলে রাস্তায় নামছে,আর ঠিক এই সময়েই “গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল” সেজে — আগ বাড়িয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের সেকেন্ড চীফ-ইন- কম্যান্ডার অভিষেক ব্যানার্জি তৃণমূল কংগ্রেসের ” নবজোয়ার “কর্মসূচি থেকে ঘোষণা করছেন পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে।আরে ,ও ঘোষণা করার কে!উনি তো একজন সাধারণ সাংসদ মাত্র। উনি ভুলে যাচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গ ,ওনার ও ওনার পিসির জমিদারি নয়। সুতরাং যা খুশি তাই বলতে পারেন না আর করতেও পারেন না।নির্বাচন কমিশন বিজ্ঞপ্তিই জারি করল না ,আর উনি বলছেন-নির্বাচন হবে। আসলে পুকুরে ঢিল ছুঁড়ে দেখতে ও বুঝতে চাইছেন ঢেউ কতখানি ওটা নামা করে। তারপর পিসি ,ভাইপো ও মেন্টররা হিসাব-নিকাশ করে দেখে ,সব বুঝে –নির্বাচন করা যাবে কিনা ভাববেন।কারন পায়ের তলার মাটি আলগা হতে হতে ধস নামতে শুরু করেছে।তাই মুখ্যমন্ত্রী পাগলের মত  ভুল বকতে শুরু করেছেন।যেমন “১৫ দিনে নার্স”,”তিন বছরে ডাক্তার”। আর সন্তানসম ভাইপোকে দিয়ে নতুন চমক দেবার উদ্দেশ্যে নির্লজ্জভাবে  সরকারি প্রশাসনকে দলীয় স্বার্থে কাজে লাগিয়ে  সংবাদ মাধ্যমকে ব্যবহার করে আমাপা কোটি কোটি টাকা খরচ করে দুমাস ব্যাপী বিলাসিতার কর্মসূচি করানো হচ্ছে।এই কর্মকান্ডের বিপুল খরচ কে বহন করছে! মোদির যেমন আদানি ভাইয়েরা আছেন তেমনি পিসি ভাইপোর কোন আদানি এই টাকা জোগাচ্ছে! ছোট, মাঝারি,বড় আদানি যারা কাটমানির টাকা কামিয়েছে,দুর্নীতিসহ চাকরি বিক্রির কোটি কোটি টাকা বস্তাবন্দি করেছে তারাই এই বিপুল টাকা দিয়ে মোচ্ছব করাচ্ছে। জানতে চাইছে আমজনতা, কার টাকায় এসব হচ্ছে।হিসাব কিন্তু একদিন তারা বুঝে নেবে। এরা সততার আড়ালে যেমন আপাদমস্তক দুর্নীতিতে নিমজ্জিত হয়েছে তেমনি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ছলনায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই কর্মসূচি কেবলমাত্র জনগণের আই ওয়াশ। শুরু থেকেই গন্ডগোল ছাপ্পা ভোট,ব্যালট বাক্স ও ব্যালট পেপার ছিনতাই এর মাধ্যমে নাকি জনগণের দ্বারা তৃণমূলের  ভালো প্রার্থী বাছাই হচ্ছে ।আসলে সত্যিই কি তাই !নাকি এইসব কর্মকাণ্ডের দ্বারা আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে লুটতরাজ, গুন্ডারাজসহ নকল ভোটের মহড়া!আসলে সবই হচ্ছে মূলত বামপন্থীদের কন্ঠ রোধ করে আবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মনোনীত সদস্য তৈরি করার ছক। গণতন্ত্রের কন্ঠস্বর আবার কেড়ে নেবার জন্য স্বৈরতন্ত্রের শিকলে বাঁধতে চাইছে মমতা ব্যানার্জি। মানুষও তৈরি হচ্ছে স্বৈরতন্ত্রের শিকল ভেঙে বেরিয়ে আসার। সেজন্য  মানুষ তার গণতন্ত্র ও অধিকার রক্ষার  জন্য কোমোর বাঁধছে।মানুষ কিন্তু এবারের নির্বাচনে মনোনীত বা  অবৈধ বোর্ড করতে দেবে না এটা নিশ্চিত।নির্বাচিত  বোর্ডের জন্য  মানুষ তৈরি হচ্ছে।আর তাই নানা ওসদুপায় অবলম্বন করে নির্বাচনকে পিছিয়ে দিয়ে দলতন্ত্র কায়েম করার জন্য তারা মরিয়া।আর এই কাজের যোগ্য সঙ্গতকারের ভূমিকায় পেয়ে গেছে বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী সহ অন্যান্য নেতাদের।তারা বলছে ২৬এ বিধানসভা চাই।আর অভিষেক বলছে ২৪ এ লোকসভায় ৪০ চাই।আর মাঝে পঞ্চায়েতের গুড়ের হাঁড়ি আমরা ভাগাভাগি করে খায়। তারাও নানা অপকৌশল প্রয়োগ করে শাসক দলের সঙ্গে গোটা খেলায় মত্ত। বি জে পি পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্য জোরালো দাবি তুলছে না। গণতন্ত্রে বিরোধীপক্ষকে দুটি দলই ভয় করছে। বিশেষ করে বামপন্থীসহ ধর্মনিরপেক্ষশক্তিকে। তাই গণতন্ত্র কে  শক্তিশালী করার জন্য বামপন্থীদের তীব্র গণআন্দোলন গড়ে তুলতেই হবে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যে রাজনৈতিক দলই প্রতিনিধি ঠিক করুক না কেন তাতে যেমন স্বচ্ছতা থাকে না তেমনি মানুষের প্রতিও তাদের দায়বদ্ধতা থাকে না ।তাদের বিশ্বাসের অবমাননা করা হয়। ১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট সরকার গঠন হওয়ার পর ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নীতি নিয়ে জনগণের হাতে ক্ষমতা দেওয়ার দৃষ্টিভঙ্গিতে তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু বলেছিলেন, “রাইটার্স বিল্ডিং থেকে সরকার চলবে না। গ্রামে গ্রামে সরকার তৈরি করতে হবে”। তার জন্যই আইন সংশোধন করে ১৯৭৮ সালে  পঞ্চায়েত নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন ।যা এক কথায় বলা যায় গ্রামীণ সরকার তৈরি করে গ্রামীণ ক্ষেত্রে যথার্থ উন্নয়নের সূচনা পর্ব ।আর এই কারণেই জ্যোতি বসুর নেতৃত্বাধীন  বামফ্রন্ট সরকারকে সাধারণ মানুষ চিরস্থায়ী শ্রদ্ধার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে ।তার জন্যই পঞ্চায়েতের  গুরুত্ব উপলব্ধি করে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী (কংগ্রেস সরকার )এই আইনের প্রশংসা করে পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত মডেলের স্বীকৃতি দেন এবং সংবিধান সংশোধন করে,সারা ভারতে লাগু করেন।

আর এই তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার সেই ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে কার্যত প্রহসনে পরিণত করে ২০১৩ ও ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ব্যাপক সন্ত্রাস, লুটতরাজ ,গাজোয়ারী করে পঞ্চায়েত গঠন ক’রে সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিকভাবে ।বিরোধীহীন পঞ্চায়েতই ওদের আস্থা। মমতা ব্যানার্জি সেই সময়ে শ্লোগান দিয়েছিলেন,”দলতন্ত্র নয় – গণতন্ত্র”এটা ছিল ধোঁকা। মুখ্যমন্ত্রীর আসনে আসীন হয়ে  মমতা ব্যানার্জি ঐ শ্লোগান উল্টে দিয়ে কায়েম করলেন,”গণতন্ত্র নয় – দলতন্ত্র”।২০১১ সালের পর স্বয়ংশাসিত সংস্থাগুলোর নির্বাচন কার্যত বন্ধ করে মনোনীত দলীয় সদস্যদের বসালেন।আর শুরু হল দখলের রাজনীতি। সমবায়, কলেজ, স্কুল ,পৌর ও বিধানসভার উপ –  নির্বাচনে, এমনকি সমস্ত ইউনিয়ন, বাজার কমিটি পর্যন্ত তৃণমূল কংগ্রেস দখলদারীর রাজনীতি কায়েম করেছিল। ২০১৮ পঞ্চায়েত নির্বাচনে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ৩৪ শতাংশ আসনে তাদের প্রার্থী মনোনয়ন নিশ্চিত করে। রাজ্য নির্বাচন কমিশন  মনোনয়নপত্র পরীক্ষা নিরীক্ষার পর, নির্বাচনের  বিধি অনুযায়ী কমিশন ঘোষণা করেছিল ,পশ্চিমবঙ্গের ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থায় ২৩ টি জেলার মধ্যে ৫৮ হাজার ৬৯২ টি আসনের মধ্যে তৃণমূল কংগ্রেস ২০,০৭৬ টি আসনে তাদের জয় (মনোনীত)নিশ্চিত করে।   গ্রাম পঞ্চায়েতের ৪৮ হাজার ৬৫০ টি আসনের মধ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ১৬৮১৪ টি আসনে কোন প্রার্থী ছিল না। পঞ্চায়েত সমিতির স্তরে ৩০৫৯ টি আসনে বিরোধী দলের কোনো প্রার্থী ছিল না।  এই স্তরে মোট আসন ছিল ৯২১৭ টি ।গ্রামীণ সরকারের উচ্চ স্তর জেলা পরিষদ। সেখানেও দেখা যাচ্ছে ৮২৫টি আসনের মধ্যে ২০৩ টি আসনে কেউই মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি।২০১৮সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বীরভূম জেলা নজিরবিহীন সন্ত্রাস,খুন,জখম,গুলি, বোমাবাজি, রক্তাক্ত পরিবেশ তৈরিতে রেকর্ড করেছিল।এর প্রধান কান্ডারী মমতা ব্যানার্জির স্নেহধন্য চড়াং চড়াং,গুড় বাতাসার , এবং খড়্গ হাতে চ্যালা চামুন্ডার নায়ক অনুব্রত।আহা, বেচারা। অনুব্রত ও তার কন্যা এখন তিহার জেলে গুড় বাতাসা ও নকুলদানা খাচ্ছে।জেল সিপাইরা খড়্গ হাতে,”গরু ও কয়লা চোর ,অক্সিজেন কম যাওয়া অনুকে এখন পাহাড়া দিচ্ছে।”এই জেলাতেই রাজনৈতিক সংঘর্ষে বেশি জীবনহানি ঘটেছে। জেলা পরিষদের ৪২ টি আসনেই অনুব্রত মন্ডলের অনুচররা বিরোধীশূন্য করে গণতন্ত্রকে সাফা করেছিল। ইতিহাসের কি নির্মম পরিহাস। ইতিহাস হিটলার ও মুসোলিনিকেও ছাড়েনি। এখানেও এরা ছাড়া পাবে না। যে আসন গুলিতে ভোট হয়েছিল, সেখানেও পরবর্তী ক্ষেত্রে বুথ দখল, ছাপ্পা ভোট এমনকি গণনা কেন্দ্রেও দখলদারি কায়েম করে প্রায় সব আসনেই মনোনীত সদস্য করে বিরোধীশূন্য করে দেওয়া হয়েছিল। তৃণমূল কংগ্রেস আরোপিত ভয়-ভীতি, সন্ত্রাস ,খুন রক্তাক্ত পরিবেশ তৈরি করে গণতন্ত্রের কন্ঠ রোধ করে মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল।সেই সময়ে বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান  বিমান বসু “দ্য ডেইলি স্টারকে”  বলেছিলেন, “বিরোধীরা তো প্রার্থী দিতেই পারেনি। যেখানে প্রার্থী নেই সেখানে জয় শব্দটিই ভুল। যদি লড়াই হতো, তবে  জয় নিয়ে কথা হতো। তৃণমূল কংগ্রেস মনোনয়নপত্র জমা দিতে দিলেই বিরোধীদের শক্তি পরীক্ষা হতো। এটা জয় নয়, গণতন্ত্র হত্যা”। এবার ২০২৩ এ পঞ্চায়েত নির্বাচনে মানুষের জোট গড়ে উঠছে।কারণ মানুষ ঠোকে শিখে ,অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হয়ে ,তার নিজের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে মানুষ কোমর বাঁধছে, মানুষ বলছে,”এবারে আর ওয়াকওভার নয়–,”মানুষ বলছে , জোট বাঁধো তৈরি হও। লুটের পঞ্চায়েত হঠাও — জনগণের পঞ্চায়েত গড়ো।[ তথ্য সংগৃহীত]