নিয়োগ দুর্নীতি ছাড়াও বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার এবং গ্রামে গ্রামে বোমা বিস্ফোরণকাণ্ডে  কোণঠাসা তৃণমূল কংগ্রেস। টিভির পর্দায় বীরভূমে বোgমা নিষ্ক্রিয় করার ক্রিয়াকলাপ দেখে মনে হচ্ছিল যুদ্ধক্ষেত্রের দৃশ্য। টিভির খবর,খবরের কাগজ দেখে পড়ে জানলাম, মিনাখাঁয়  তৃণমূল নেতা মামার তৈরি বোমা বাড়িতেই ফেটে গেল বলে নিহত হল মামা বাড়িতে বেড়াতে আসা কিশোরী। তৃণমূলের এম এল এ মদন মিত্র অস্ত্র উদ্ধার প্রসঙ্গে বলেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের ছেলেদের  ট্রেনিং নিয়ে কাজে লাগাতে। শুনে বিরক্ত মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেছেন,” পাগলে কি না বলে ছাগলে কি না খায়” ফলে  নির্বাচনের আগে সাঁড়াশি আক্রমণের মুখে পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল।মিডিয়ার মারফত বিজেপিকে প্রধান বিরোধী দল হিসাবে তুলে ধরার মরীয়া চেষ্টা ব‍্যর্থ হওয়ার পর শিক্ষক নিয়োগে বঞ্চিত যোগ‍্য প্রার্থীদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে  লাগাতার আন্দোলনে থাকা বামপন্থীদের পাল্টা আক্রমণ করে রাজনৈতিক ফয়দা তুলতে চাইছে মমতা ব‍্যানার্জীর দল। কিছু নিয়োগপ্রার্থীকে বিভ্রান্ত করে বামপন্থীদের প্রতিবাদ ও নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে মামলা করাকে প্রধান বাধা হিসাবে প্রচার করে সিপিআইএমের রাজ‍্য  দপ্তরে   হামলা করার ইন্ধন যোগানোর চেষ্টা করেছেন স্বয়ং শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত‍্য বসু। আলিমুদ্দিন স্ট্রীটে বিক্ষোভ দেখাতে যাওয়া চাকরিপ্রার্থী(?) রা প্রধানত বোঝাতে চেষ্টা করেছেন যে, সিপিআইএমের পরোক্ষ প্ররোচনায় প্রাথমিক ও মাধ‍্যমিক শিক্ষক  নিয়োগপ্রক্রিয়ার র বিরুদ্ধে মামলা করা হচ্ছে বলেই তাঁরা রাজ‍্য সরকারের সদিচ্ছা সত্ত্বেও চাকরি পাচ্ছেন না। মুখ‍্যমন্ত্রী মমতা ব‍্যানার্জীর অনুগামী বা গুণগ্রাহী হিসাবে  তাঁদের দোষ দেওয়া যায় না।

কারণ প্রকাশ‍্য জনসভায় সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ‍্যমন্ত্রী কখনও আইনজীবী তথা সিপিআইএম সাংসদ বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের নাম করে কখনও নাম না করে সরাসরি বামপন্থীদের দায়ী করেছেন তাঁর সরকারের  শিক্ষকতার  চাকরি না দিতে পারার জন‍্য। কারণ “চাকরি দিতে চাইলেই তো কেস করে দিচ্ছে !” আবার যোগ‍্যতা নির্ণয়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও যে কর্মপ্রার্থীরা  ছয়শো পঁচিশ দিনের বেশি অবস্থানে রয়েছেন,তাঁদের উদ্দেশ্যে শিক্ষামন্ত্রী নাট‍্যকার অভিনেতা পরিচালক ব্রাত‍্য বসু বলেছেন চাকরি পেতে গেলে আন্দোলনকারীদের কোর্টে যেতে হবে।

অথচ বার বার আদালতের পক্ষ থেকে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে এই সব মামলা নিয়োগের ক্ষেত্রে কোন বাধা নয়। বাধা নয়, সেটা মমতা ব‍্যানার্জী ও ব্রাত‍্য বসু ভালোভাবেই জানেন। আসল বাধা তো টাকার বিনিময়ে যাদের নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন সরকার পোষিত বিদ‍্যালয়ের কর্মরত সেই সব শিক্ষক শিক্ষিকারা, যাদের সরিয়ে না দিলে যোগ‍্য বঞ্চিত  প্রার্থীদের সবাইকে নিয়োগ করা অসম্ভব। তাদের তো প্রথমেই বরাভয় দিয়েছেন মুখ‍্যমন্ত্রী,”কারুর চাকরি যাবে না!” মানে নিজেদের চামড়া বাঁচাতেই দুর্নীতিগ্রস্তদের বরখাস্ত করতে চাইছেন না মমতা ব‍্যানার্জী, ব্রাত‍্য বসুরা।

অথচ পার্থ চ‍্যাটার্জী,মানিক ভট্টাচার্য,কল‍্যাণময় গাঙ্গুলি,সুবীরেশ ভট্টাচার্য,অশোক সাহা, এস পি সিনহা রা জেলবন্দী থাকা বড়ো দায়,তাই আরও একটা মরীয়া আইনি প্রয়াস শুরু হয়েছে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এজলাস থেকে এই নিয়োগ দুর্নীতি মামলা সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন‍্য। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে  তাঁর অর্থের  বিনিময়ে বেআইনিভাবে নিযুক্ত শিক্ষকদের স্বেচ্ছায় পদত‍্যাগ করার নির্দেশ দেওয়াকেই  হাতিয়ার করে এগোতে চাইছেন কর্মরত শিক্ষকদের কয়েকজন:! তাঁরা কারা? বলাবাহুল‍্য যাঁরা কর্মচ‍্যুতির আশঙ্কায় রয়েছেন। কোনভাবেই স্বচ্ছ নিয়োগের আশ্বাস দেওয়া রাজ‍্য সরকারের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না এঁদের দিকে তাকিয়েই।

কিন্তু আখেরে দাঁড়ালো কি? পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাব‍্যবস্থা দাঁড়িয়ে আছে কোথায়? স্কুলগুলিতে মাস্টারমশাই নেই। আর থাকলেও সংখ্যা কম শূন্যপদ বেশি। নতুন নিয়োগ হলেও তা হয়েছে মূলত টাকার বিনিময়ে, যোগ্যতার মাপকাঠি বাদ দিয়ে। কার্যত শিক্ষাকে এমন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে যাতে, শিক্ষার আগ্রহটা আস্তে আস্তে কমুক, ছাত্ররা পারলে বেসরকারি দিকে চলে যাক, বেসরকারি ব্যবসা বাড়ুক। সরকার পরিকল্পিতভাবে সেই মনোভাব নিয়েই চলছে।

আমাদের আশঙ্কা  সবমিলিয়ে প্রায় ৪০ হাজার ভুয়ো নিয়োগ হয়েছে। এই দুর্নীতি অন্ততপক্ষে ৪০০০ কোটি টাকার দুর্নীতি।  স্পষ্ট, বলা যাক  ২.৫ লক্ষ শূন্যপদ ৮-১০ বছর ধরে সেই শূন্যপদে নিয়োগ না করার বদলে সরকার লেখা পড়া জানা যুবককে বঞ্চিত করেছে। আর সরকারের শূন্যপদ ৬ লক্ষ। তাহলে কেন ২.৫ লাখ বলা হচ্ছে? প্রায় ১.৫ লক্ষ কোটি টাকা এই লোপাট করে দেওয়ার চেষ্টা করছে সরকার।