নিবন্ধের শীর্ষনামটি একটি প্রচলিত প্রবাদ একথা সবাই জানেন। কেবল জানেন না বোধহয় এ রাজ্যের শাসক দলের নেতারা। দলের সুপ্রীমোর অনুপ্রেরণায় ও জনগণের বিপুল ভোট পাবার ধারাবাহিকতায় ওদের মাথা থেকে এই সত্য উবে গিয়েছিল। তার ওপর রয়েছে গা জোয়ারি করে ভোটে জেতার অপকম্ম। ওরা মনে করেছিলেন যা খুশি, যেমন খুশি করার লাইসেন্স ওরা পেয়ে গিয়ছেন। এখনো পর্যন্ত প্রকাশিত পাহাড় প্রমাণ দুর্নীতির চিত্র সেই কথাই প্রমাণ করে। আরো নেতাগণ, যাদের নাম বাজারে ভেসে বেড়াচ্ছে, না জানি তাদের বিষয়ে তদন্ত হলে আরো কত চক্ষু কপালে তোলা চুরি-দু্র্নীতির চিত্র বঙ্গবাসীর জন্য অপেক্ষা করে আছে।       এখনো পর্যন্ত যা জানা গেছে পার্থ-অর্পিতার দুটি কোম্পানি ‘অপা ইউটিলিটি সার্ভিস’ ও ‘অনন্ত টেক্সফ্যাব প্রাইভেট লিমিটেড’-এর নামে খোলা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সংখ্যা ১৩১টি। ২০১৬ সালে নোটবন্দির সময়ে এই সমস্ত অ্যাকাউন্টের একাংশের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করা হয়েছিল বলে তদন্তকারী অফিসারদের দাবি।

এই অফিসারদের সূত্রে খবর, এখনো পর্যন্ত অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে পাওয়া নগদ টাকার পাহাড়, সোনা গয়না এবং উল্লেখিত দুটি সংস্থার নামে থাকা সম্পত্তি ও ১৩১টি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে লেনদেনের ভিত্তিতে প্রায় ১৫০ কোটি টাকার দুর্নীতি সামনে এসেছে। তদন্তকারীদের অনুমান দুর্নীতির শিকড় আরো গভীরে। সেইখান পর্যন্ত পৌঁছতে পারলে এই সম্পত্তি ও টাকার অঙ্ক ৩০০ কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে। তাঁদের অভিমত, কেবল পার্থ ও অর্পিতাই চুরির টাকা নিয়েছেন তা নয়, ‘চাকরি বিক্রি করা লুটের টাকা’র বড়ো অংশ গিয়েছে অন্য ‘প্রভাবশালী’দের কাছেও। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টগুলি থেকে বিপুল পরিমাণ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। তবে এই সন্দেহজনক লেনদেন সবথেকে বেশি হয়েছে ২০১৬-১৭ সালে। পরে ওই টাকার এক অংশ ব্যাঙ্ক থেকে তোলা হয়। সেই টাকায় যেমন জমি, খামারবাড়ি, বাগানবাড়ি সহ নানা সম্পত্তি কেনা হয়, তেমন অর্পিতার ফ্ল্যাটেও রাখা হয়। সেখান থেকে সেই টাকা হাওয়ালা মারফৎ বাংলাদেশ সহ নানা দেশে পাচার হয়ে থাকতে পারে। অর্পিতার ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার হওয়া ৫০ কোটি টাকা এখন ই ডি-র কব্জায়। কিন্তু আগেই বিপুল অঙ্কের টাকা পাচার হয়ে গিয়ে থাকতে পারে বলে তদন্তকারীদের ধারণা।                   

এতো গেল শাসক দলের মহাসচিব তথা প্রাক্তন শিল্প ও শিক্ষামন্ত্রী পার্থবাবুর কিসসা। এবার আসা যাক সুপ্রীমোর অত্যন্ত স্নেহধন্য দোর্দন্ডপ্রতাপ নেতা বীরভূমের জেলা সভাপতি অনুব্রত মন্ডলের বিষয়ে। পার্থ ও অর্পিতার সম্পদ ও সম্পত্তির যেমন কোনো সীমা পরিসীমা নেই। একই চিত্র অনুব্রতর ক্ষেত্রেও। গত ২০১৫ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে তিনি স্বনামে এবং স্ত্রী ও মেয়ের নামে করেছেন ৪৫টি জমির দলিল। এছাড়া গয়েশপুর মৌজায় ১৬টি জমি, বোলপুর মৌজায় ৪টি জমি এবং খোশকদমপুর মৌজায় ২টি জমি রয়েছে অনুব্রতের নামে। এগুলি কেনা হয়েছে ২০২১ সালে। সর্বমোট ২০১৭ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে তৃণমূলের জেলা সভাপতির নামে প্রায় ২৪০ কাঠা জমি কেনা হয়েছে বলে সরকারি সূত্রের খবর।                 কথায় বলে ‘বাঁশের চেয়ে কঞ্চি দড়’। তাই অনুব্রতের দেহরক্ষীও কম যায়না। সামান্য একজন পুলিশ কনস্টেবল সেহগল আজ ধনকুবের। কলকাতার রাজারহাটে তার একাধিক বিলাসবহুল ফ্ল্যাট সহ বিপুল সম্পত্তি। লাখ লাখ টাকার গয়না। বেআইনি গোরু পাচার, অবৈধ বালি, পাথর, কয়লা পাচারের টাকায়  একদা মাগুর মাছ বিক্রেতা অনুব্রত আজ ফুলেফেঁপে ঢোল। তার কতগুলি রাইসমিল, ডাম্পার,ক্রাশার মেসিন ইয়ত্তা নেই। সবই তৃণমূল ও মমতার দৌলতে।               

আর একটি খবরে রাজ্য তোলপাড়। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি তথা নাকাশিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্য নিখোঁজ। তাঁর নামে সি বি আই জারি করেছে লুক আউট নোটিশ। একজন জনপ্রতিনিধির নামে এই নোটিশ জারি এই প্রথম। ছি ছি ঘেন্না! এই সব কেষ্ট, বিষ্টু, হীরে, মানিক নিয়ে মমতার সংসার? মানুষের ভোটে জিতে এই অনাচার? এসব মানুষ মেনে নেবে? তৃণমূলের চোর নেতাদের বিচার চাই। তৃণমূল থেকে বি জে পি-তে পালিয়ে যাওয়া নেতাদেরও বিচার চাই। চোর ধরো, জেলে পোরো। দুর্নীতিগ্রস্ত তৃণমূলকে ক্ষমতা থেকে টেনে নামাও।