আগে ইন্ডিয়ার ক্রিকেট ম্যাচ থাকলেই পরেরদিন অনেকেই বলত-“ভারত জিতল নাকি ইন্ডিয়া হারল”, হিন্দী ধারাভাষ্যে ভারত আর ইংরাজিতে ইন্ডিয়া এই নিয়ে বেশ চলছিল৷ কোথাও কোনো সমস্যা ছিল না। রিচি বেনো থেকে আমাদের রবি শাস্ত্রী কারও ইন্ডিয়া বা ভারতে কোনো সমস্যা হয়নি। ২০১৪ এর পরবর্তীতে দেশের সরকারের প্রস্তাবিত নীতি -” হিন্দী, হিন্দু, হিন্দুস্তান ” যত সমস্যার সৃষ্টি করল।  এমনকি কর্মক্ষেত্রের বিভিন্ন জায়গায় যেমন বিভিন্ন ব্যাংকের কাস্টমার কেয়ার গুলোতে আঞ্চলিক ভাষার ব্যাবহারের বদলে হিন্দীকে চাপিয়ে দেওয়ার যে প্রবণতা তৈরি করে দেওয়া আসলে  হিন্দী হিন্দু হিন্দুস্থান নীতির নির্লজ্জ প্রয়োগ ছাড়া কিছু না।  এক দেশ এক আইন, এক দেশ এক ভাষা,এক দেশ এক ধর্ম এসবের জন্য ধাক্কা খেল “বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য”। সরকারের বাদ দিয়ে দেওয়ার বা ভুলিয়ে দেওয়ার নীতির কোপে সিলেবাস থেকে বাদ পড়ল মূঘল আমলের ইতিহাস, পিথাগোরাস এর উপপাদ্যর মত বিষয়গুলো। বদলে এল জ্যোতিষ শাস্ত্র, পালি ভাষা ইত্যাদি বিষয় গুলো। কিন্তু!!  কত কিছু বাদ দেওয়া যাবে?? বা কত বাদ দেওয়া সম্ভব৷ 

বাদ দিতে হলে বাংলা ভাষার মধ্যের বহুলব্যাবহৃত ফারসি শব্দগুলো কে বাদ দিতে হবে,বাদ দিতে হবে হিন্দি র মধ্যে প্রচলিত উর্দু শব্দ গুলোকে। ভারতবর্ষের যেকোন জায়গায় পাঁচ কিংবা দশ কিলোমিটার পর থেকেই ভাষার বিভিন্নতা দেখা যায়৷ একটা রাজ্যের মধ্যে এমনকি একটা শহরের মধ্যেও উচ্চারণ এর বিভিন্নতা, ভাষার বিভিন্নতা অতীব স্পষ্ট, ভাষার বিভিন্নতা খুব ভালো করেই লক্ষ্য করা যায়। আর ভারতবর্ষের ভাষাগত, সংস্কৃতিগত, লোকাচার গত বৈচিত্র্যর মধ্যে যে ঐক্য তা ই ভারতবর্ষের প্রাণ, একথা সরকার বাবুরা ভুলে যাচ্ছেন বলেই আজকের ইন্ডিয়ার  প্রতিটা কোণায় অদেখা বিভাজনের ভারতীয় দাগ বেশ ভালোভাবেই চোখে পড়ছে।  

সংবিধানের ” যাহাই ইন্ডিয়া তাহাই ভারত” কে হাতিয়ার করে দেশের প্রধানমন্ত্রীর নেমপ্লেট এ ভারত কিংবা নৈশভোজের আমন্ত্রণ পত্রের “ভারত” আসলে নির্বাচন কেন্দ্রিক বিভাজনের ইস্যু তৈরির আকরবস্তু ছাড়া আর কিছুই নয়। দিল্লীর জি ২০ সম্মেলনে ভারত আমেরিকার কতটা কাছাকাছি থাকবে তা নিয়ে উন্মাদনা উত্তেজনা কিংবা আন্তর্জাতিক সম্পর্কে ভারতের অবস্থান পুঁজিবাদের পক্ষে নাকি শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষের পক্ষে থাকবে তা নিয়ে জনমানসের মধ্যে দ্বন্দ্বের ভিড়েও বাস্তব হল দিল্লীর জি ২০ সম্মেলনের মধ্যে চাপা পড়ে থাকা বস্তির অভুক্ত বাচ্চার কান্নার সত্যিটা হিন্দী হিন্দু হিন্দুস্থান দিয়ে চেপে দেওয়া,যাবে না। ক্ষুধার সূচকের নিরিখে ভারত যে পিছিয়ে আছে এই সত্যিটাকেও বদলে দেওয়া যাবে না। বেকারত্বর নিরিখে ভারত এর আজকের অবস্থান যুবসমাজের পক্ষে যে চিন্তার বিষয় সেই সত্যিটাকেও বদলে দেওয়া যাবে না। এমনকি cag রিপোর্টের মাধ্যমে প্রমাণ হয়ে যাওয়া চুরিটাও কোনো বিভাজন বদলে দিতে পারবে না। কিংবা দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোকে ব্যাবসায়ীদের কাছে বিক্রি করার ফলে সাধারণ মানুষের দুর্দশার বাস্তবটাও  লন্ডন থেকে আসতে চলা শিবাজির বাঘনখ ভুলিয়ে দিতে পারবে না। দিনের শেষে খিদের জ্বালাটা সবার ই এক, জাতীয়তাবাদ দেশাত্মবোধের প্রলেপ কিংবা সম্মোহনে এ জ্বালা কমে না।