আজকে আমার আলোচ্য অভিন্ন দেওয়ানি বিধি। গুজরাট ভোটের ঠিক আগে হঠাত্‍ বিজেপি ঘোষণা করেছে জিতলে  অভিন্ন দেওয়ানি বিধি লাগু করবে ।  লাগু  হলে আমাদের কী মঙ্গল হবে, তা নিয়ে আপনার স্পষ্ট ধারণা আছে কিনা জানিনা , কিন্তু এই বিধি নিয়ে বামপন্থীদের  অবস্থান, আমার ধারণা,  খুবই স্পষ্ট।  যে কথাটি বামপন্থীরা একেবারে সাধারণ সূত্র বলেই  মনে করে   তা হলো ভারতের মতো একটি বহুভাষাভাষী , বহুজাতীয় , বহুধর্মীয় , এবং বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক ও নৃতাত্বিক বহুত্বসম্পন্ন দেশে অভিন্নতার চেয়েও অনেক বেশি শ্রেয়তর হলো সমতা।  সুতরাং অভিন্ন দেওয়ানি বিধি-র মানে দাঁড়াক সব ধর্মের (সব মানে সব) ব্যক্তিগত আইনের সংস্কার  এবং ধর্মনিরপেক্ষ আইনগুলির পরিধিবৃদ্ধি।  শুধু শরিয়তি আইন নয় , হিন্দু ব্যক্তিগত আইনেও নারীর বিরুদ্ধে বৈষম্যের নানা বন্দোবস্ত টিকে আছে। 

যৌথ পরিবারের ক্ষেত্রে উত্তরাধিকারের আইন ছাড়াও  দত্তক  নেওয়ার প্রশ্নে  সন্তানের অভিভাবকত্ব  বিষয়ক প্রশ্নে হিন্দু ব্যক্তিগত আইন এখনো নারীর প্রতি বৈষম্যমূলক। সব বদলাতে হবে কিন্তু জবরদস্তি করে নয়। বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে।  যেভাবে ভেবেছিলেন আম্বেদকর।  সেকথায় পরে আসছি।  আমাদের মত বামপন্থীরা বিজেপির এই নির্বাচনী ঘোষণার বিরোধিতা করছে কেন? কারণ বাস্তবে এর মধ্যে দিয়ে   নির্দিষ্ট একটি ধর্মীয় সম্প্রদায়কে টার্গেট করে নির্বাচকমণ্ডলীর মধ্যে ধর্মীয় মেরুকরণ ঘটানোর জন্যে এই ঘোষণা করা হচ্ছে।  জীবনের বাস্তব সমস্যাগুলি সমাধানে বিজেপি সরকারের ব্যর্থতা  যাতে গুজরাটের ভোটারকে আলোড়িত না করে, তাই এই ইস্যুর অবতারণা।  বিজেপির  অভিন্ন দেওয়ানি বিধি লাগু করার  প্রচার  গুজরাটে ভোটের আগে মুসলিমবিদ্বেষ চাগিয়ে তোলার  অস্ত্র।  এ বিষয়ের প্রচার শুধুমাত্র দেশের মূলস্রোতে মুসলমান যে ভিনদেশি এই কুত্সাকে  সবচেয়ে জোরদার করতে চায়।  আমরা মনে করি বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যার দেশে এরকম প্রচার কখনো কাম্য নয়।  এবং আমরা  বিরোধিতা করার সময় মনে রাখি এই বিজেপি-র পূর্বসূরিরাই (শ্যামাপ্রসাদের নেতৃত্বে) হিন্দু কোড সংস্কারের চূড়ান্ত বিরোধিতা করেছেন।  এখনো পর্যন্ত এ দেশের হিন্দু মেয়েরা যেটুকু প্রগতিশীল অধিকার আদায় করতে পেরেছেন , তা পেরেছেন বিজেপি ও সংঘ পরিবারের বিরোধিতা অতিক্রম করেই।  আমাদের মত বামপন্থীরা কেন মনে করে  ওপর থেকে জোর জবরদস্তি নয় তলা থেকে পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে  ব্যক্তিগত  আইন পাল্টানো উচিত ? কারণ এদেশের সংবিধান প্রণেতারাও সেটাই মনে করতেন। 

কনষ্টিটুয়েন্ট অ্যাসেম্বলিতে ১৯৪৮ সালে  অভিন্ন দেওয়ানি বিধি সম্পর্কে সংবিধানের ৪৪ নং ধারা নিয়ে আম্বেদকরের প্রাসঙ্গিক বক্তব্য ছিল :…There is no obligation upon the State to do away with personal laws. It is only giving power. Therefore, no one need be apprehensive of the fact that if the State has the power, the State will immediately proceed to execute or enforce that power in a manner that may be found to be objectionable by the Muslims or by the Christians or by any other community in India…
কথাগুলোর মর্মার্থ শুভচিন্তক সকলেরই বোঝা দরকার বলে আমাদের মত মানুষজন  মনে করে। এরকম মনে করা ঠিক কিনা সেটা নিয়ে আলোচনা হলে তবেই এ বিষয়ে অনেক বিভ্রান্তি কাটবে আশা রাখি ।