সেদিন গর্জে উঠেছিল কামদুনি।উত্তাল হয়েছিল সারা দেশ। তাঁরা ধর্ষক ও খুনীদের বিচার চেয়েছিলেন। রাষ্ট্রযন্ত্রের গোড়ায় গলদের জন্য আসামীরা ছাড়া পেয়ে গেলএবং শাস্তিও কমে গেল।গাছের গোড়া কেটে ডগে জল ঢাললে যেমন গাছ বাঁচে না। তেমনি কামদুনির কিশোরীর উপর বিরলতম নৃশংস ঘটনার তথ্য প্রমাণ লোপাট করে দিয়ে পুলিশ কিংবা সি আই ডির অদক্ষতার সাফাই গেয়ে দায়িত্ব ও কর্তব্য এড়িয়ে যাওয়া যায় না।যাঁরা তদন্তের দায়িত্বে ছিলেন তাঁদেরকেই তো জবাবদিহি করতে হবে।আমি মনে করি, তদন্তকারী অফিসার ও সি আই ডি দক্ষতার সাথেই চার্জ সিট পেশ করেছিলেন।যাতে আসামীদের লঘু শাস্তি হয়। তদন্ত চলাকালীন এই মামলার প্রধান স্বাক্ষী কিভাবে খুন হয়ে যায় ! রাজনৈতিক সদিচ্ছা থাকলে প্রধান স্বাক্ষীকে — পুলিশ কি আগলে রাখতে পারত না ! কেন তাঁকে নিরাপত্তা দেওয়া হল না। ঐ খুনের আসামীদের বিচরণ এখন কোথায় ——তাদের বিচার আদৌ হবে কিনা তা কেউই বলতে পারবেন না।কারন কর্তার ইচ্ছাই কর্ম।আসলে এই মামলার প্রথম থেকেই মোটিভ ছিল ভিন্ন প্রকৃতির।সেজন্য-ই তো মামলাটি বারাসাত থানা থেকে রাজারহাট থানায় নিয়ে আসা হলো।বারাসত আদালত থেকে নগরদায়রা আদালতে মামলা গেল।১৬ বার সরকারি কৌঁসুলি পরিবর্তন হল। সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য সরকার আপিল করেছে লোকদেখান্তি। সুপ্রিম কোর্টে লড়াই হবে কাগজপত্রে। কাগজপত্রতো ফাঁকা। তাহলে অপরাধীদের ফাঁসি হবে কি করে।যে দুষ্কৃতীরা ছাড়া পেয়ে গেল তাদের কি আর জেলে ঢোকানো যাবে কিংবা যাবজ্জীবন হবে? অনুগ্রহ করে মাননীয়া বলবেন ?????? তদন্তের গোড়াতে কিছু করা হল না, আর এখন লোকদেখান্তি সুপ্রিম কোর্টে মাননীয়া গেলেন। ছলনাময়ীর ছলনার শেষ নাই।তা না হলে কামদুনিতে প্রতিবাদী মঞ্চের পাশাপাশি তৃণমূল কংগ্রেস কাদের স্বার্থে “শান্তি রক্ষা কমিটি”গঠন করে। কাদের জন্য শান্তি রক্ষা!আসলে এই সব করে,বিরলতম ও নৃশংস ঘটনাটির মূলগত চরিত্র বদলে দেবার জন্য নানা ফন্দিফিকির করা হয়েছিল।যাতে করে ভাইদের বিপদ না হয়।
আজ যখন নারীদের সমানাধিকার, নিরাপত্তা, মহিলা সংরক্ষণ বিল নিয়ে আলোচনা চলছে তখনই দেখা যাচ্ছে নারীদের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা দেওয়া ও অসহযোগিতা বাড়ছে। কোথায় সংবেদনশীলতা!প্রতিদিন কোথাও না কোথাও নারীদের ধর্ষণ,খুন,পাচার, নির্যাতনের মত ঘটনা বাড়ছে ,মূলত রাষ্ট্রের অসহযোগিতার কারনে। আশ্চর্যের বিষয় হলো,২০২৩ এর ১ জুলাই দেওয়ানদিঘির মির্জাপুরে এক মহিলা ধর্ষিতা হলেন।ঐ মহিলা থানায় যাবার পরও তাঁর ডাইরী কিংবা এফ আই আর নেওয়া হয়নি।ঐ মহিলা আদালতে গেলেন। আদালতের নির্দেশে তিন মাস পর ঐ মহিলার বয়ান FIR করা হল। একজন আসামী জেলবন্দি থাকলেও বাকি তিনজন পুলিশের ছত্রছায়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।এরকম অসংখ্য উদাহরণ আছে। নিরাপত্তাহীনতা ও পুলিশের অসহযোগিতা এবং শাস্তির হার দেখে এ রাজ্যে নারীদের ভাবিয়ে তুলেছে।
২০২১ সালে এন সি আর বি –র রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে, দেশে নথিভুক্ত ধর্ষণের ঘটনার সংখ্যা ৩১,৬৭৭ অর্থাৎ দিনে গড়ে ৮৬ টি ধর্ষণ রেকর্ডেড হয়েছে। ওই বছর, সারা দেশে মহিলাদের উপর অত্যাচারের মোট নথিভুক্ত অভিযোগের সংখ্যা ৪, ২৮,২৭৮ টি। সাজার সংখ্যা দেখলে শিউড়ে উঠতে হয়।২০২১ সালে সারা দেশে ধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধের সাজা হয়েছে মাত্র ২৮.৬ শতাংশ,এটা ২০২০ সালের থেকেও কম। আরো মারাত্মক হল যে, পশ্চিমবঙ্গে সাজার হার আরও খারাপ, মাত্র ২.৫%। যত দিন যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের শাস্তি দানের হার ক্রমশ কমছে।যেমন ২০০৮ সালে যেখানে শাস্তি দানের হার ছিল ১৫.২ শতাংশ ,২০১০ এ ১৩.৭ শতাংশ এবং ২০১২ তে আরো কমে দাঁড়িয়েছে ১০.৯ শতাংশ। ২০১৪ সালের জানুয়ারি মাসের একটি সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, কেন্দ্রের রিপোর্টে (এন সি আর বি রিপোর্ট)আরো বলছে, মহিলাদের উপর অপরাধের হারে গোটা দেশের চেয়ে পশ্চিমবঙ্গের হার প্রায় দ্বিগুণ। প্রতি এক লক্ষে ভারতে যেখানে মহিলাদের উপর ক্রাইমের হার ৪১.৭৪, পশ্চিমবঙ্গে তা ৭০.৩ শতাংশ।এখানে দিদি মুখ্যমন্ত্রী না——
কন্যাশ্রী, রূপশ্রী ,লক্ষ্মীর ভান্ডার সহ আরো কত কি চলছে — আর তারই আড়ালে নারীদের সম্ভম ,সম্মান, সমানাধিকার, লুট হয়ে যাচ্ছে। সরকার চোখে ঠুলি পড়ে বসে আছেন নবান্নে। আরও আছে —পড়ুন, দেখুন, রাজ্যবাসীকে জানান।
পশ্চিমবঙ্গ নারী পাচারে দেশের মধ্যে দশম স্থানে, আ্যসিড হামলায় প্রথম, পণপ্রথাসহ বধূ নির্যাতনে মৃত্যুর সংখ্যায় বাংলা চতুর্থ, নারীদের বিরুদ্ধে সব ধরনের অপরাধমূলক ঘটনার সংখ্যায় বাংলা চতুর্থ, মাত্র ২.৫%শতাংশ মামলায় সাজা হওয়ায় উল্লসিত মানুষরূপী পশুপ্রবৃত্তির দল। পুলিশের কলম এর জন্য অনেকটাই দায়ী, বলা যেতেই পারে।তার সাথে আছে রাষ্ট্রশক্তির প্রতক্ষ্য ও পরোক্ষ মদত।একটা রাজ্যের মূল কর্নধার যদি অপরাধকে ছোট করে দেখেন, তাহলে সেই রাজ্যের অপরাধীদের মৃগয়া ক্ষেত্রতো হবেই।আর সেটাই ঘটে চলেছে দিন দিন। কামদুনির নির্যাতিতা কিশোরী যেমন সুবিচার পেল না, তেমনি রাজ্যবাসীর বিচার বিশ্লেষণের সময় এসেছে এই সরকারকে আর রাখবে কিনা ——–হোক পরিবর্তনের জোরদার লড়াই।এ লড়াই জেতার লড়াই। পশ্চিমবঙ্গের বুকে নেমে আসা কালো ক্ষতের কাল রাতের অন্ধকারকে সরিয়ে আবার নবোদিত সূর্যের আলোয় আলোকিত এক নতুন সকাল শুরু হোক। মানুষের জয় নিশ্চিত।

[তথা সংগৃহীত]১১।১১।২৩