ইয়াভুজ মানে ভয়ঙ্কর। ক্ষমতাবানরা উপাধি গ্রহণ করেন। কেউ অগ্নিকন্যা বা ঘুগনিকন্যা হন, কেউ ফকির সাজেন। ইয়াভুজ কিন্তু উপাধি নয়, ডাক নাম। পোষাকি নাম সেলিম। তিনি আব্বাসীয় বংশকে পরাজিত করে মক্কা-মদিনার প্রথম উসমানীয় খলিফা হন। গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। পিতা দ্বিতীয় বায়েজীদ পুত্র শাহজাদা আহমেদকে উত্তরাধিকারী মনোনীত করলে দ্বিতীয় সন্তান সেলিম-১ ভাইদের নিধন করে পিতাকেও বন্দী করে হত্যা করেন। সেলিমের পুত্র সুলতান সুলেইমান পুত্রের গ্রহণযোগ্যতা বেড়ে যাচ্ছে আশঙ্কায় পুত্র মোস্তাফাকে ফাঁসী দেন। একটি গালিচায় পরিবারের সবাই বসতে পারলেও একটি পৃথিবী বাদশাহর জন্য খুব সঙ্কীর্ণ। এদের পরিবার হয় না। সেলিম পানিপথ যুদ্ধে বাবরকে কামান দিয়ে সাহায্য করেন। ঔরঙ্গজীব দারা, সুজা ও মুরাদকে পরাজিত এবং পিতা শাহজাহানকে বন্দী করে বাদশাহ হন। কিছু মানুষের কাছে তিনি জিন্দাপীর। তিনি সাচ্চা মুসলিম এবং অমুসলিম প্রজাদের উপর জিজিয়া কর বসিয়েছিলেন। সুতরাং ইয়াভুজ মানেই যে ভয়ঙ্কর, ভোট পাবেন না, তা নয়। ক্ষমতার খেলাটাই ভিন্ন।

চাপরাশিরা সাঁড়াশি দিয়ে চেপে ধরে যদি বোঝায়, তুমি যুবরাজ, তুমি সেনাপতি, তোমার হর্ম্য হারেম শোভিত হবে, তাহলে মাথা ও যন্ত্রাংশ খারাপ হতে বাধ্য। মিডিয়ায় তোমার ছবি দেখাচ্ছে, হোর্ডিংএ মন্ত্রীর মাথার উপর তোমার জোড়হস্ত কাটামুন্ডু, সুস্হ মানুষও ক্ষমতার উন্মাদ হয়ে যায়। গণতান্ত্রিক ভারতে এমন বহু স্বৈরাতান্ত্রিক ক্ষমতাশালী পরিবার আছে। চাটুকার অশিক্ষিত মানুষের যেহেতু গণতন্ত্র সম্পর্কে ধারণা কম, এই পরিবারগুলো রাজতান্ত্রিক বেপরোয়া ভোগসুখ দখলদারি চালিয়ে যাচ্ছে। নয়া দাবীদার সর্বদা চান, জীবনের মধ্য গগনে নিরঙ্কুশ ক্ষমতার স্বপ্ন জান্নাতে দাঁড়িয়ে ষড়রিপুর পূর্ণ ব্যবহার। প্রয়োজনে বুলডোজার দিয়ে পূর্বপুরুষ প্রভাবশালীকে জাহান্নামে পাঠাতে কার্পণ্য করবে না। দলের ভিতর ভাঙনরেখা স্পষ্টতর হবে। কেউ নবীন, কেউ প্রবীণ। কেউ ক্ষমতা আঁকড়ে শেষ বিন্দু মধুটুকু শুষে নিয়ে চিতায় উঠতে চায়, কেউ চায় বৃদ্ধ লাশের পেট চিরে বদহজমের মধুটুকু শুষে খেতে। কেউ যদি ফতোয়া দেয়, জীবন শেষ হবে ষাটে। তবে জানবেন, সে যুবরাজের উৎসাহদাত্রীর ডাক এসেছে পরপারের ঘাটে।

যদু বংশ কীভাবে ধ্বংস হয়েছিল? কুরুক্ষেত্রের ছত্রিশ বর্ষ অতিক্রান্ত হতেই ক্ষত্রিয় শূন্য ভূমিতে কৃষ্ণের যদুবংশ দুর্নীতি, সুরা ও নারীতে নিমগ্ন হল। ভোজ, অন্ধক, বৃষ্ণিরা গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে লিপ্ত হলেন। উৎপাটিত শরগুলি মুষলের আকার নিল। গান্ধারী, নারদ, কণ্বমুনির অভিশাপ তো প্রতীকী, ভগবত গীতার স্রষ্টা চেয়েছিলেন সমাপ্তি। সেই প্রভাসতীর্থ গুজরাতে। ২০১৬ সালে উত্তর প্রদেশে যাদব পরিবারের সাইকেল নিয়ে টানাটানি করছিলেন মুলায়েম সিং যাদব ও পুত্র অখিলেশ যাদব। ২০১২ সালে সমাজবাদী পার্টি বিজয়ী হলে, পিতা মুলায়েম দ্বিতীয় স্ত্রী সাধনার আপত্তিতে কর্ণপাত না করে অখিলেশকে রাজ্যের কুর্সি উপহার দিয়েছিলেন। অমর সিং শকুনিমামার চরিত্রে। পিতা মুলায়েম ২০১৬ সালে অখিলেশ ও ভাই রামগোপালকে সমাজবাদী পার্টি থেকে বহিষ্কার করেন। শেষ অবধি সাইকেলের হ্যান্ডেল মুলায়েম ধরে রাখতে পারেননি। পরাজিত পিতার অবস্হা তখন আগ্রা দুর্গে বন্দী শাহজাহানের মত। ২০২২ সালে পরলোকগত হন মুলায়েম। যোগী আদিত্যনাথ উত্তর প্রদেশের নয়া ভোগী অবতার রূপে আবির্ভূত হন।

বিহারের যাদব পরিবারের কী দশা? আরজেডির মালিক লালু প্রসাদ যাদব ভাগ্যচক্রে চারা ঘোটালায় দোষী সাব্যস্ত। এমন সুখবর উত্তরপুরুষদের ভাগ্যে খুব একটা জোটে না। পারিবারিক শাসনে তরবারির ঝঙ্কার থাকবে না, তা হয় না। বড় ছেলে তেজ প্রতাপ যাদবের সাথে কুরুক্ষেত্র শুরু হল তেজস্বী প্রতাপ যাদবের। বিহার শাখার প্রবীণ নেতা জগদানন্দ সিংকে অপমান করে লালুর বিরাগভাজন হলেন তেজ প্রতাপ। সেই সুযোগ সদ্ব্যবহার করে লন্ঠন হাতালেন তেজস্বী প্রতাপ। নীতীশের সাথে বিজেপির ফাটল বাড়ছিল, তবু পারিবারিক কোন্দলে সুযোগ হাতছাড়া হল। তেজহারা প্রতাপ আরজেডি ছেড়ে সংগঠিত করেন লালু-রাবড়ি মোর্চা। নামেই দরিদ্র যাদবদের রাজতান্ত্রিক ইন্দ্রিয়সুখ। শেষ অবধি বর্তমানে তেজস্বী প্রতাপ বিহারের উপ-মুখ্যমন্ত্রী। অখিলেশের মুখ্যমন্ত্রীত্বও করা হয়ে গেছে। মায়াবতীর ভাইপো আকাশ আনন্দের হাতে যাচ্ছে বহুজন সমাজ পার্টির ভবিষ্যতের মালিকানা। ২৮ বছর বয়সী আকাশ আনন্দ বিলেতী বৈধ এম.বি.এ ডিগ্রী নিয়ে এসেছেন। চাপে বঙ্গ পিসির স্বপ্ন বিভোর উচ্চাকাঙ্খী ভেঁপু ভাইপো।

ব্যক্তি মালিকাধীন আঞ্চলিক দলগুলিতে পারিবারিক দ্বন্দ্ব অব্যাহত। সিংহাসন ও ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে বাঁচা মালিকের মৃত্যু স্বস্তির কারণ হয়, নয়ত চোখের সামনে পতনের যবনিকা নেমে আসে। মারাঠা স্ট্রং ম্যান, তিন বার মুখ্যমন্ত্রী, কেন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ঘড়ির মালিক এনসিপি নেতা শারদ পাওয়ার ভাইপো অজিত পাওয়ারের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। বাপের বন্ধ ঘড়ি আঁকড়ে বসে আছেন কন্যা সুপ্রিয়া সুলে। এনারা দেশের জোট বাঁধবেন কী করে? ক্ষমতার অলিন্দে পারিবারিক উঠোনের ফাটল রুখতে পারেন না। শিবসেনার প্রতিষ্ঠাতা বাল ঠাকরে কোন দিন সাংগঠনিক নির্বাচনের ধারে কাছে হাঁটেননি। পুত্র উদ্ভব ঠাকরে ছিলেন পারিবারিক উত্তরাধিকারী। ভাইপো রাজ ঠাকরের দ্বন্দ্বে মারাঠা যোদ্ধারা তির-ধনুক হারালেন একনাথ শিল্ডের কাছে। রাজ ঠাকরে নির্মাণ করেছেন মহারাষ্ট্র নব-নির্মাণ সেনা। কেবল বিহার, উত্তর প্রদেশ নয়, যে কোন আঞ্চলিক ব্যক্তি মালিকাধীন নীতিহীন দলগুলি কোন না কোন সময়ে এই মুষল পর্বের মধ্যে এসে পড়বেই। তীব্র লুন্ঠন, ভোগ সুখের ভিতর নিহিত আছে মৃত্যুবাণ।

পূর্বপুরুষের লুন্ঠিত সম্পদ বংশে ইয়াভুজদের জন্ম দেয়। সুলতান সুলেইমান পুত্র মোস্তাফাকে খুব স্নেহ করতেন বলে খুন করবেন না তা নয়। কিংবা সেলিম পিতা বায়াজীদকে সম্মান করলেও হত্যা করবেন। শেখ আবদুল্লার নাতি, ফারুক আবদুল্লার পুত্র ওমর আবদুল্লা ৩১ বছর বয়সে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়েছেন। জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী মুফতি মহম্মদ সাইদের কন্যা মেহেবুবা মুফতিও মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। চৌধুরী চরণ সিংহের পুত্র অজিত সিংহ বারবার বিভিন্ন সরকারের মন্ত্রী হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী দেবীলালের পুত্র ওমপ্রকাশ চৌতালা মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। ওডিশার বিখ্যাত নেতা বিজু পট্টনায়কের পুত্র নবীন পট্টনায়েক মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। তুলনামূলক ভাবে বলা যেতে পারে শিক্ষা ও সংস্কৃতিতে অগ্রগামী বাংলা রোগমুক্ত ছিল ২০১১ সাল অবধি। অন্ধ্রপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর পুত্র জগন্মোহন রেড্ডির পুত্রও মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেছেন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রী এইচ.ডি দেবগৌড়ার পুত্র এইচ.ডি কুমরাস্বামী মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। তামিলনাডুর করুণানিধির পুত্র এম.কে স্তালিনও অধিকার আদায়ে ভুল করেননি।

অভিনেতা এম.জি রামচন্দ্রনের প্রেমিকা জয়ললিতা থেকে এন.টি রামারাওয়ের জামাই চন্দ্রবাবু নাইডুর ইতিহাসও লেখা আছে। রাজা পঞ্চম জর্জের আগমনে লেখা হয় জনগন মন… আজও প্রভাবশালীদের পরিবারগুলি দরিদ্র ভারতবাসীর ভাগ্যবিধাতা। বাবা সাহেব আম্বেদকার সংবিধানে কী লিখেছেন, নিঃস্ব নিরক্ষর ভারতবাসীর কাছে তা হিব্রুর চেয়ে কঠিনতর। তুলনামূলক ভাবে পিসির ভেঁপু কেবল সাংসদ আর সেনাপতি। স্বাধীনোত্তর ভারতের কান্ডারী কংগ্রেস পারিবারতন্ত্রের যাঁতাকালে বিলুপ্ত হবার পথে তবু মাথা সোজা করে দাঁড়াতে পারেনি। জওহরলাল নেহরু বা ইন্দিরা গান্ধী ভাবতেও পারেননি, আদপেই কি তাঁদের বংশধররা রাজনীতিতে প্রাজ্ঞ হতে পারবেন? সিংহাসনের ইতিহাস যে ভবিষ্যৎকে সুনিশ্চিত দিশা দিয়ে রেখেছে। তরুণ যুবা সিংহাসনে ঘুমিয়ে এক দিন বৃদ্ধ হয়ে যাবেন, কিন্তু সিংহাসনে কটা পায়া আছে বলতে পারবেন না। সেটুকু পরিশ্রমের সিলেবাসও দলীয় অলিখিত গঠনতন্ত্রে নেই। এর জন্য দায়ী কি কেবল সিংহাসনের শিশু, নাকি যে পক্বকেশের চালিয়াতরা এই অবস্হাটাই রাখতে উদ্যোগী?

সফল ও ব্যর্থতার ইয়াভুজদের সহস্র উদাহরণের কয়েকটি উল্লিখিত হল মাত্র। ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে কিন্তু জনগন ব্যতিক্রমী ভাবনায় অভ্যস্ত নয়। ডায়মন্ড হারবারে সেনাপতি বলে দিলেন, কেবল মাত্র একটি লোকসভা কেন্দ্রে ৭৬ হাজার ১২০ জন বার্ধক্য ভাতা পাচ্ছেন না। তাহলে দুয়ারে সরকার প্রকল্প ভাঁওতা ছিল? একজন দুজন ফস্কে যাওয়া নয়। স্রেফ নির্লজ্জ বলে মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী সেনাপতির কথার অর্থ উপলব্ধি করতে পারলেন না, কিংবা হজম করতে বাধ্য হচ্ছেন। তাঁদের বার্ধক্য ভাতা সরকার দেবে না, দেবেন সেনাপতি। বাৎসরিক খরচ ৯৩ কোটি টাকা। নিশ্চই সেই আয়ের পথ সেনাপতির আছে বা পূর্বসূরী করে দিয়েছেন। শকুনি মামারা ইন্ধন দিচ্ছেন। নচি-কেতা আর কচি-নেতাদের সঙ্ঘর্ষ চলছে। ভাইপো বলছেন, বালাই ষাট। যৌবন গেলে ফুল মালায় সাজিয়ে তোল শ্মশানের খাট। পিসি বলছেন, ধুত্তোর, আমি তো ঊনসত্তর। এখনও পাবলিক ভোট দেয় আমার ছবিতে। সেনাপতি হাসেন, ৮৪ সালে কংগ্রেস ক্ষমতায় ফিরেছিল ইন্দিরা গান্ধীর চিতার ছবি দেখে। তারপর ছবির সামনে ধূপ দিয়েছিল রেখে।

সেনাপতি বলছেন, পঁয়ষট্টির পর মানুষ কর্ম ক্ষমতা থাকে না। পাল্টা যুক্তি, তাহলে সত্তরোর্ধ মন্ত্রীর যুবতী প্রেমিকার খাটের তলায় কোটি কোটি নোট আসে কোথ্থেকে? কেন চালমন্ত্রী দার্জিলিংএ পরস্ত্রী নিয়ে বেচাল করেন? এখনও দলের ও লাভলি নেতারা বৃদ্ধ মদন। নিচু তলার সৈনিকরা সামনা সামনি বিবৃতির লড়াই করছে যখন, ইয়াভুজ গোপন ছুরিতে শান দিচ্ছে। ইতিহাসে আছে, ঘসেটি বেগম কী নির্মমতায় সিরাজের মৃত্যু খুঁজেছিলেন। আজকের সিরাজ রাজ করার স্বপ্নে ভুল করতে নারাজ। তা ছাড়া এত দিন ট্রেডমিল আর শ্রেয়া শেঠের পুলটিস লাগিয়ে ফটোশপ করে বাঁচার দরকার কী? রুশ, জার্মান, ফিলিপিন্সের বান্ধবীরা এতটা সময় দেবে মেহেফিলের সোহাগে? ইয়াভুজরা দিল্লীর চৌকিদারের সাথে সরাসরি কথা বলে ফয়সালা করতে চায়। ফলতঃ পূর্বসূরীর ছেড়ে যাওয়া হাওয়াই চটিতে স্নিকার পরা পা গলিয়ে দেবার পদ্ধতি খুব সহজ ও সরল হবে না। উভয়ে শাহজাহান, শৌকত, কাইজার, আরাবুল, বাকিবুরদের নিয়ে সেনাবাহিনী সুসজ্জিত করবেন। এই যুদ্ধের তল্লাশে মোদী-শাহ উৎকন্ঠিত অপেক্ষায়।

এই যুদ্ধের জন্য প্রাথমিক বিনিয়োগ অগাধ অর্থ। প্রশাসন, সাংবাদিক, সুশীল, গুন্ডাবাহিনী সব কেনা যায় নগদ কাঞ্চন-কামিনী মূল্যে। একজন কৈকেয়ী বা শকুনি মামা ঐতিহাসিক প্রয়োজনে দুয়ারে হাজির হয়ে যাবে। মোদী-শাহরা দুই পক্ষকেই মদত বজায় রাখবেন। ইতিহাস ইডিপাসের কথা বলে। মহাভারতে বভ্রূবাহন পিতা অর্জুনকে হত্যা করলে উলুপি পুনর্জীবিত করেন। মগধের রাজা বিম্বিসার পুত্র অজাতশত্রুর হাতে নিহত হন। মেওয়ার রাজ্যের রাণা কুম্ভের মৃত্যু পুত্র উদয়ের হাতে। একবিংশ শতাব্দীতেই নেপালের রাজা বীরেন্দ্র খুন হন দীপেন্দ্রর বন্দুকে। ইসলামিক রাজতন্ত্রের ইতিহাস ঘাটলে প্যাট্রিসাইডের অভিধান লেখা সম্ভব। এমনকি ভারত, বাংলাদেশে জাতির জনকও রেহাই পাননি। হত্যা কেবল মাত্র শারীরিক নয়। সেই অর্থে ঔরঙ্গজীব শাহজাহানকে অস্ত্র দ্বারা খুন করেননি। ক্ষমতার অনন্ত লালসা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের ধারণা খুব কম। তাদের কাছে অধিক সন্তান মানে অধিক সুরক্ষা। তৃতীয় মেহমেদ মসনদে আরোহণ করে প্রথম নির্দেশে ঊনিশ জন ভাইকে মৃত্যুদন্ড ঘোষণা করেছেন।    

ইয়াভুজদের জন্ম দেন নীতিহীন শাসক। ইয়াভুজরা চাটুকারদের সম্ভাষণ খেয়ে পুষ্টি লাভ করে। তারা বিলাস দেখে বড় হয়, বিশ্ব থাকে হাতের মুঠোয়। আমেরিকার শ্রেষ্ঠ হাসপাতালে চিকিৎসা হয়, দুবাই সাগরতীরে বসে মেহেফিল। সোনালী চুলের রূপসীরা দেহবল্লরীর ছন্দ তোলে দুর্মূল্য ফরাসী পেয়ালায়। তারা দেশ চেনে না, কেবল রাজনীতি জানে। পশু খামারের মালিক পশুর ভাষা না বুঝলেও কতটা খাদ্য দিলে আয় ভাল হবে, তা বোঝে। হারেমে নারীরা যেমন যৌন যাতনায় একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী, ঠিক তেমন চাটুকাররা একে অপরকে পেছন থেকে ছুরি মেরে পদসেবায় মগ্ন হতে চায়। ক্ষমতার অলিন্দে রক্তপথে আগমন, কিন্তু নেশার ঘোরে হারিয়ে যায় বিসর্জনের বিধি লিখন। ঠিক সময়ে মানুষ জোট বাঁধে। ব্রিগেডে ওঠে জনতার ঢেউ। খানসামা প্রশাসন, মিডিয়া লুকিয়ে রাখে ইয়াভুজের দৃষ্টির আড়ালে। বিশ্বর আদি সৃষ্টির নিয়ম আড়াল করা যায় না। যে হিটলার এক বছর আগে বলেছিলেন, কম্যুনিষ্টরা খতম। ঠিক বর্ষপূর্তিতে নিজের মাথায় গুলি করতে হয়। অন্য কেউ গুলি করে না। বাকিটা নিজে করে।