রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিতে যিনি ছিলেন ‘দেশনায়ক’, আমাদের দেশের সেই জনপ্রিয় স্বাধীনতা সংগ্রামী ও দেশপ্রেমিক নেতাজী সুভাষচন্দ্র  বসু প্রসঙ্গে একটি নির্দিষ্ট সময়ে তথা ইস্যুতে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির ভুল মূল্যায়নকে কেন্দ্র করে জলঘোলা করা আজও চলছে। সে নিয়েই দু-চার কথা অবতারণার লক্ষ্যে এই নিবন্ধ।

     সুভাষচন্দ্র নিজেকে সমাজতান্ত্রিক বলে মনে করতেন। স্বাধীনোত্তর ভারতকে গড়ে তোলার প্রশ্নে তিনি খোলাখুলি সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েতের আদলে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়নের কথা বলতেন। দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ব্যাপক শ্রমজীবী মানুষের অংশগ্রহণ ঘটানো ও স্বাধীন দেশের অর্থনৈতিক নির্মাণ প্রশ্নে তাঁর চিন্তাধারা কমিউনিষ্ট তথা বামপন্থীদের অনেক কাছাকাছি ছিল। তিনি ব্যক্তিগতভাবে জাতীয় নেতা হিসেবে গান্ধীজীকে খুবই শ্রদ্ধা করতেন একথা ঠিক।

 তবে প্রকৃত অর্থে রাজনৈতিক গুরু বলে যাঁকে মানতেন, সেই দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ ১৯২২ সালে কংগ্রেসের গয়া অধিবেশনে পূর্ণ স্বরাজের কথা বলে প্রত্যাখ্যাত হয়ে ‘স্বরাজ্য’ দল গঠন করেছিলেন। আর ওই অধিবেশনেই কমিউনিষ্টরা বেসরকারি প্রস্তাব তুলেছিলেন পূর্ণ স্বাধীনতার দাবিতে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য সে সময়ে কংগ্রেস ছিল স্বাধীনতা সংগ্রামের বৃহত্তর মঞ্চ। কমিউনিস্টরা কংগ্রেসের মধ্যেই কাজ করতেন। এক দশক পরে সুভাষচন্দ্র লিখলেন, ‘—কংগ্রেসের মধ্যে গান্ধী নেতৃত্বের বিরূদ্ধে প্রধান বিদ্রোহী অংশ ছিলেন স্বরাজপন্থীরা। তাছাড়া আর একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠীও এই সময় আত্মপ্রকাশ করল—বোম্বাইতে ডাঙ্গের নেতৃত্বে। এঁরা ছিলেন ভারতের প্রথম কমিউনিস্ট গোষ্ঠী।’ যদিও প্রথম কমিউনিস্ট গোষ্ঠী হলেন তাঁরাই যাঁরা ১৯২০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের তাসখন্দে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি গড়ে তুলেছিলেন। সুভাষচন্দ্রের সেই তথ্য হয়তো জানা ছিল না।

যাইহোক, ১৯২২-এর আগের বছর ১৯২১ সালে ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের আমেদাবাদ অধিবেশনে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির নামে একটি ঘোষণাপত্র বিতরিত হয়। যাতে বলা হয় যে, পূর্ণ স্বরাজের অর্থ হতে হবে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সঙ্গে সম্পূর্ণ সম্পর্কছিন্ন পূর্ণ স্বাধীন ভারতীয় প্রজাতন্ত্র গঠন, যেখানে সমস্ত প্রাপ্তবয়স্ক নরনারীর ভোটাধিকার থাকবে, সামন্ততন্ত্র উচ্ছেদ করে জমি চাষিদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। বিদেশী পুঁজি বাজেয়াপ্ত করা হবে ইত্যাদি। এই ইস্তেহারটি পুনরায় বিতরণ করা হয় পরের বছর অর্থাৎ ১৯২২-এর গয়া অধিবেশনে। আমেদাবাদ অধিবেশনে বামপন্থী নেতা মৌলানা হসরৎ মোহানি উপরোক্ত ঘোষণাপত্রটি সংশোধনী আকারে পেশ করেন কিন্তু গান্ধীজীর বিরোধিতায় সংশোধনীগুলি পরাস্ত হয়। এই ঘটনারও উল্লেখ করে এক দশক পরে ওই একই লেখায় সুভাষচন্দ্র লেখেন যে, জননেতা মৌলানা হসরৎ মোহানি একটি প্রস্তাব উত্থাপন করে বলেন যে জাতীয় আন্দোলনের লক্ষ্য হওয়া উচিত পরিপূর্ণ স্বাধীন ভারতীয় প্রজাতন্ত্র  প্রতিষ্ঠা করা—গান্ধীজীর বিরোধিতায় প্রস্তাবটি পরাজিত হল। কিন্ত এই দাবি বারবারই এই সময় থেকে কংগ্রেসের মঞ্চে উত্থাপিত হতে থাকল।

    ১৯২০ সালে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েতের মস্কো শহরে নবগঠিত কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকের দ্বিতীয় কংগ্রেসে লেনিন পরাধীন দেশগুলিতে বিপ্লবের রণকৌশল নিয়ে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। যার শীর্ষনাম হল ‘প্রিলিমিনারি ড্রাফট থিসিস অন দ্য ন্যাশনাল এন্ড কলোনিয়াল কোয়েশ্চেন’। আলোচনা-প্রতি আলোচনার মধ্য দিয়ে এটি চূড়ান্ত হয় ও সেই নির্দেশিকা অনুযায়ী আমেদাবাদ ও গয়া অধিবেশনেই ভারতের কমিউনিস্টরা সীমিত ক্ষমতা নিয়ে ভূমিকা পালনে সচেষ্ট হয় এবং সুভাষচন্দ্রও অনেক পরে তাঁর লেখায় তার স্বীকৃতি প্রদান করেন। আর একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিক ও লেনিনের পরামর্শে এম এন রায় আন্তর্জাতিকের চতুর্থ কংগ্রেসে যোগদানের জন্য পাঁচজন ভারতীয় নেতার কাছে একটি আমন্ত্রণ লিপি পাঠান। তাঁরা হলেন প্রবীণ বিপ্লবী শচীন্দ্রনাথ সান্যাল, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের পুত্র চিররঞ্জন দাশ, সুভাষচন্দ্র বসু, এস এ ডাঙ্গে সহ আর একজন। তবে ব্রিটিশ শাসকের কঠোর নজর এড়িয়ে কেউই যেতে পারেন নি ওই কংগ্রেসে যোগ দিতে।

    যথেষ্ট মতপার্থক্য ও মতবিরোধ থাকা সত্ত্বেও সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী সংগ্রামের মঞ্চে বারবার কাছাকাছি এসেছেন সুভাষচন্দ্র ও ভারতের কমিউনিস্ট নেতারা। ১৯২৯-এ মূলত কমিউনিস্টদের সমর্থনেই সুভাষচন্দ্র নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস (AITUC)-এর সভাপতি নির্বাচিত হন।

     ১৯৩৮ সালে হরিপুরা কংগ্রেসে সুভাষচন্দ্রের সভাপতি নির্বাচিত হবার ঘটনাটি জাতীয় কংগ্রেসের মধ্যে কমিউনিষ্ট ও বামপন্থী অংশের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের সংকেত। ইতিপূর্বে ১৯৩৫ সালে কমিউনিষ্ট আন্তর্জাতিকের সপ্তম কংগ্রেসের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যুক্তফ্রন্টের কর্মসূচি গৃহীত হওয়ায় কংগ্রেসের ভেতরে কমিউনিষ্টদের কাজ করার আরো নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়। কংগ্রেস সোস্যালিস্ট পার্টি গঠনও কংগ্রেসের ভেতর বামপন্থী কর্মধারা প্রণয়নের সুযোগকে বৃদ্ধি করে।

     হরিপুরা কংগ্রেসের মাস দুয়েক আগে ব্রিটিশ কমিউনিষ্ট পার্টির দৈনিক মুখপত্র ‘ডেইলি ওয়ার্কার’-এ কমিউনিষ্ট নেতা রজনী পাম দত্তের নেওয়া সাক্ষাৎকারে সুভাষচন্দ্র বলেন ‘—আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই যে মার্কস  ও লেনিন তাঁদের  রচনার  মারফৎ যে কমিউনিষ্ট মতবাদ প্রচার করেছেন তার আমি অনুরাগী এবং আমি এটাও লক্ষ্য করেছি যে কমিউনিষ্ট আন্তর্জাতিক আমাদের জাতীয় স্বাধীনতার সংগ্রামকে বরাবরই সমর্থন করে এসেছে।’

      এই একই উপলব্ধির মাত্রা স্পষ্ট হয়ে ওঠে হরিপুরা অধিবেশনের অভিভাষণেও—“I would appeal specially to the leftist groups in the country to pull all their strength and their resources for democratizing  the Congress and recognizing it on the broadest anti-imperialist basis. In making this appeal, I am greatly encouraged by the attitude of the leaders of the British Communist Party whose general policy with regard to India seems to me to be in keeping with that of the Indian National Congress.”

     সুভাষচন্দ্রের এহেন অবস্থান সর্দার প্যাটেল, রাজেন্দ্রপ্রসাদ প্রমুখ কংগ্রেসের দক্ষিণপন্থী অংশের সহ্য হয়নি। তাই পরের বছরেই অর্থাৎ ১৯৩৯ সালের ত্রিপুরী কংগ্রেসে তাঁরা সুভাষচন্দ্রকে সভাপতি না করার জন্য কোমর বাঁধেন। গান্ধীজীকেও তাঁরা সঙ্গে পেয়ে যান। কিন্ত শেষমেশ তাঁদের সভাপতি পদপ্রার্থী পট্টভি সীতারামাইয়াকে পরাস্ত করে ২৯ এপ্রিল সুভাষচন্দ্রই কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচিত হন। এটা সম্ভব হয় কংগ্রেসের মধ্যে থাকা কমিউনিষ্ট ও সোস্যালিস্টদের সমর্থনের জোরে। যদিও কংগ্রেসের দক্ষিণপন্থী অংশের ক্রমাগত বাধাদান ও অসহযোগিতায় সুভাষচন্দ্র তিন মাসের মাথায় কংগ্রেস সভাপতির পদ ত্যাগ করতে বাধ্য হন। গঠন করেন ফরওয়ার্ড ব্লক এবং বাম সমন্বয় কমিটি। বাম সমন্বয়ের কাজেও কমিউনিষ্টরা সুভাষচন্দ্রকে প্রভূত সহযোগিতা করেছিলেন। এই প্রশ্নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণকারী কমিউনিষ্ট নেতারা হলেন সোমনাথ লাহিড়ী, আব্দুল হালিম, গোপাল হালদার প্রমুখ। অবশেষে ১১ আগষ্ট, ১৯৩৯ সুভাষচন্দ্রকে কংগ্রেস থেকে বহিষ্কার করা হয়।

    একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলা দরকার। তা হল কংগ্রেস সভাপতি থাকাকালীন সুভাষচন্দ্র ১৯৩৮ সালে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির  বাংলা শাখার নব পর্যায়ে প্রকাশিত মাসিক ‘গণশক্তি’র প্রথম সংখ্যায় শুভেচ্ছাসূচক অভিনন্দন বাণী দিয়েছিলেন। এছাড়া পার্টির কেন্দ্রীয় মুখপত্র National Front-এ তিনি প্রবন্ধ লিখেছিলেন। এই ঘটনাগুলি সুভাষ বোস ও কমিউনিস্টদের মধ্যে সম্পর্কের রসায়ন বুঝতে পাঠকদের সাহায্য করে।

     এবার আসা যাক সুভাষচন্দ্রের দেশত্যাগ প্রশ্নে। কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ বিবাদের জেরেই মূলত সুভাষচন্দ্রের দেশত্যাগ। যে লক্ষ্য ও কর্মসূচিকে সামনে রেখে কংগ্রেস সভাপতির পদ ত্যাগ, ফরোয়ার্ড ব্লক গঠন সেই লক্ষ্য পূরণে ইতিবাচক  অগ্রগতি ঘটল না। কংগ্রেসের মধ্যে বামপন্থী শক্তির বিকাশে সুভাষচন্দ্রের নিজের পদক্ষেপ যথার্থ ছিল কিনা এ প্রশ্ন উঠে আসে। এই প্রতিকূল অবস্থায় বিকল্প পথে ঘুরে দাঁড়ানোর ঝুঁকি নিয়ে  দেশত্যাগ ছাড়া অন্য কোনো পথ ঠিক করা সম্ভব হয়নি সুভাষচন্দ্রের পক্ষে।

    দেশ ছাড়ার সময় যিনি সুভাষচন্দ্রকে বর্ডার পেরিয়ে আফগানিস্তান নিয়ে যান তিনি কমরেড ভগৎরাম তলোয়ার। কাবুলে যাঁর বাড়িতে সুভাষ আশ্রয় নেন তিনি পার্টির গোপন সদস্য। এরপর জার্মানি গিয়ে ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে হিটলারের সাহায্য প্রার্থনা। কিন্তু একটি বিশ্ব মানচিত্র দেখিয়ে দূরত্বের অজুহাতে হিটলারের সুভাষচন্দ্রকে প্রত্যাখান। শেষে অক্ষশক্তির আর এক শরিক জাপানের শরণাপন্ন হয়ে জাপান যাত্রা। আজাদ হিন্দ বাহিনীর সর্বাধিনায়কের দায়িত্ব গ্রহণ। ‘শত্রুর শত্রু আমার মিত্র’ এই যুদ্ধকৌশলের বশবর্তী হয়ে সুভাষচন্দ্রের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অক্ষশক্তির শরণাপন্ন হওয়া।দেশের স্বাধীনতার জন্য উদগ্র আকাঙ্ক্ষা তাঁকে এই পথে নিয়ে এল। যতরকমের ভুল বোঝাবুঝি ও বিতর্কের সৃষ্টি তখন থেকেই।

    অক্ষশক্তির পরস্পরের মধ্যে কোনো আদর্শগত ঐক্য ছিল না। যুদ্ধ সংক্রান্ত প্রশ্নে কেউ কাউকে আগে সংবাদ দিত না। একপক্ষ ঘটনা ঘটাবার পরে অন্য পক্ষ জানতে পারত। এমনকি জার্মানির সোভিয়েত আক্রমণের কোনো পূর্বাভাস জাপানকে দেওয়া হয় নি। উল্টে জাপান বরাবর চেষ্টা করেছে সোভিয়েত ইউনিয়নকে অক্ষশক্তিতে সামিল করতে। সোভিয়েত আক্রমণের ঘটনা সুভাষচন্দ্রও পছন্দ করেন নি বলে জানা যায়।

     জাপানিরা আজাদ হিন্দ  ফৌজকে যথেষ্ট পরিমাণ অস্ত্র দেয় নি, সামরিক শিক্ষা দেয়নি, সাজ-পোশাক দেয় নি, বিমান বাহিনীর সাহায্য দেয় নি, দিনের পর দিন অভুক্ত রেখেছে। তথাপি আজাদ হিন্দ বাহিনীর জওয়ানরা অসাধারণ বীরত্ব প্রদর্শন করেছে কেবলমাত্র সুভাষচন্দ্রের দুঃসাহসিক নেতৃত্ব গুণে। ইম্ফলের যুদ্ধে আজাদ হিন্দ বাহিনীকে জাপ বাহিনীর সামনে থাকতে দেওয়া হয় নি। কারণ জাপ বাহিনীর কাছে এই যুদ্ধ ছিল নিজেদের পশ্চাৎভাগ রক্ষার যুদ্ধ, ব্রিটিশ বাহিনীকে পরাস্ত করার যুদ্ধ নয়। সুভাষচন্দ্রের আশা ছিল আজাদ হিন্দ বাহিনী সম্মুখ যুদ্ধে থাকলে ব্রিটিশ বাহিনীর ভারতীয় সেনারা বিদ্রোহ করবে এবং ভারতের জনগণের অভ্যুত্থান ঘটবে। কিন্ত জাপানের কূট কৌশলে সুভাষচন্দ্রের আশা পূরণ হল না। এই ছিল অক্ষশক্তির সাহায্য দানের চেহারা। অথচ সুভাষচন্দ্রের অক্ষশক্তি নির্ভরতার  অনেক বিরূপ সমালোচনাও হল। ভারতের কমিউনিস্টরাও ভুল মূল্যায়ন করলেন। তবে পরবর্তী সময়ে সেই ভুল তারা সংশোধন করেছেন। পরে এটা পরিষ্কার হয়েছে যে ফ্যাসিস্টদের পক্ষ অবলম্বন করার কোনো অভিপ্রায় সুভাষের ছিল না। কেবলমাত্র দেশের স্বাধীনতা অর্জনই তাঁর কাছে একমাত্র অগ্রাধিকার ছিল। আর জাপানের হাতের পুতুল হবার ভাবনাও ঠিক নয়। কারণ স্বাধীনতাকামী দেশপ্রেমিক সুভাষ তা কখনোই হতে দিতেন না। যেমন দেন নি চিনের জাতীয়তাবাদী নেতা সান ইয়াৎ সেন। তিনি প্রথম দিকে জাপানের সাহায্য নিলেও পরে জাপানের বিরুদ্ধেই সংগ্রামের অভিমুখ নির্দিষ্ট করেছিলেন। সুভাষচন্দ্রের কাছেও জাপানের নেতিবাচক মনোভাব ক্রমশ পরিস্ফূট হয়ে উঠছিল। তাই অন্যতর শক্তি ও সাহায্য অন্বেষণে তিনি মনে মনে উদগ্রীব হয়ে ওঠেন নি একথা জোর দিয়ে বলা যায় না।

     কিন্ত যারা ‘তোজোর কুকুর’ প্রসঙ্গটি বারবার আউড়ে চলেছে সেই বিজেপির পূর্বসূরি হিন্দু মহাসভা ও আর এস এস-এর ভুমিকা কী ছিল সেই সময়ে? ওদের নেতা সাভারকার কেবল মুচলেকা দিয়ে ব্রিটিশের জেল থেকে মুক্তিসাধন করেছে তাই নয়, ব্রিটিশের সঙ্গে গোপন চুক্তি মারফৎ হিন্দু যুবকদের  বেশি বেশি করে ব্রিটিশ বাহিনীতে নিয়োগের লক্ষ্যে ‘রিক্রুটমেন্ট ক্যাম্প’ সংগঠিত করেছে ও তা নিয়ে প্রচুর পরিশ্রম করেছে। দেশকে স্বাধীন করায় উদ্যোগী হবার পরিবর্তে ব্রিটিশের দালালি করেছে। সুভাষচন্দ্র স্বয়ং হিন্দু মহাসভা ও মুসলিম লীগের কঠোর সমালোচক ছিলেন। তাঁর এই কঠোর মনোভাব পর্যবেক্ষণ করেই শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় মন্তব্য করেছিলেন যে সুভাষ ক্ষমতায় এলে তাদের ‘নিবংশ’ করে ছাড়বেন।