ধর্মঘট ভাঙতে দু’দিন আগেই জারি করেছিলেন সরকারি বিজ্ঞপ্তি। ধর্মঘট সফল হওয়ার খবর পেয়ে ধর্মঘটীদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। 

রবিবার থেকে পাঁচদিনের জন্য উত্তরবঙ্গ সফরে মমতা ব্যানার্জি। এদিন তিনি ছিলেন দার্জিলিঙে। সকাল থেকে রাজ্যের সর্বত্র ধর্মঘটীদের রাস্তায় নেমে প্রতিবাদের খবর পৌঁছে যায় মমতা ব্যানার্জির কাছে। রেল অবরোধ, রাস্তা অবরোধ করে কেন্দ্রের নীতির বিরুদ্ধে রাজ্যজুড়ে মানুষের প্রতিবাদ দেখে এদিন দার্জিলিঙ পাহাড় থেকে ধর্মঘটীদের বিরুদ্ধে সরকারি আইনে এফআইআর করার নির্দেশ দিলেন। প্রসঙ্গত, ২০১৭সালে মমতা ব্যানার্জির সরকারই রাজ্য বিধানসভায় ওয়েস্ট বেঙ্গল মেনটেনেন্স অব পাবলিক অর্ডার(অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল, ২০১৭ পাশ করিয়েছিল। ওই আইনের সাহায্যেই ধর্মঘটীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন মমতা ব্যানার্জি। কেন্দ্রের মোদী সরকারের বিরুদ্ধে এখন এই কালা আইনকে ব্যবহার করতে মরিয়া রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বলেছেন, যারা সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর করেছে তাদের বিরুদ্ধে এফআইআর করে ক্ষতিপূরণ আদায় করা হবে।

মুখ্যমন্ত্রীর ধর্মঘট বিরোধী প্রতিক্রিয়ার কড়া জবাব দিয়েছেন সিপিআই(এম) রাজ্য কমিটির সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তাঁর বক্তব্য,‘‘ মোদী সরকারের নীতির বিরুদ্ধে সর্বভারতীয় ধর্মঘট ছিল। উনি তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছেন! আসলে ওনাকে (মমতা ব্যানার্জি) নাগপুরের কাছে, মোদী সাহেবের কাছে প্রমাণ করতে হবে মানুষের কন্ঠরোধ করতে আমি তোমাদের থেকেও হিংস্র।’’ 

কৃষকদের ফসলের লাভজনক দর, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিক্রি, কাজ, শ্রমকোড বাতিল সহ একাধিক দাবিতে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে দেশব্যাপি ৪৮ঘণ্টার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন ও ফেডারেশন সমূহ। এরাজ্যে সেই ধর্মঘট ভাঙতে সরকার শুরু থেকেই সক্রিয় ছিল। ধর্মঘটের প্রথম দিনেই মমতা ব্যানার্জির পুলিশ সক্রিয় বিরোধিতা করতে ধর্মঘটীদের ওপর চড়াও হয়। এমনকি তৃণমূল কর্মীরা পর্যন্ত দলীয় পতাকা নিয়ে মিছিল করে ধর্মঘটের বিরোধিতায় নামে। এত কিছুর পরে ধর্মঘটকে যে আটকানো যায়নি তা মুখ্যমন্ত্রীর কথাতেই পরিষ্কার হয়ে যায়। পাহাড় থেকে তিনি বলেন,‘‘ রাজ্যে কেন বাস ভাঙে সিপিএম। লক্ষ লক্ষ টাকার বাস মানুষের জন্য চলছে। সরকারি সম্পত্তি। ইস্যুকে আমরা সমর্থন করি। বন্‌ধকে সমর্থন করি না।’’  মুখ্যমন্ত্রীর এই মন্তব্য প্রসঙ্গে মহম্মদ সেলিমকে প্রশ্ন করা হলে তাঁর জবাব ছিল,‘‘ কেন্দ্রের যে আর্থিক নীতির বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিবাদ মমতা ব্যানার্জি নিজেই তা অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলেন। তাই এই নীতির বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই, উনি ভাবেন এটা ওনার বিরুদ্ধে বলা হচ্ছে। তাই উনি সম্রাটের থেকেও বেশি অনুগত থাকতে চান।’’ 

এদিন ধর্মঘটের সাফল্য দেখে ক্ষিপ্ত মমতা ব্যানার্জি ‘গুন্ডামি করা হয়েছে’ বলেও মন্তব্য করেন। তারপরই রাজ্যের সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করার জন্য আইনের সাহায্যে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার হুমকি দিয়ে দেন। যার প্রতিক্রিয়ায় মহম্মদ সেলিম বলেছেন,‘‘ বন্‌ধ কেন?  উনি মিছিল করার বিরুদ্ধে। পোস্টার লাগানোর বিরুদ্ধে। বিরোধী দলের অফিস খোলারও বিরুদ্ধে। আসলে উনি গণতন্ত্রেরই বিরুদ্ধে। ধর্মঘট হচ্ছে শ্রমজীবী মানুষের হাতিয়ার।’’

দু’দিন আগেই নবান্ন থেকে রীতিমতো নির্দেশিকা জারি করে ধর্মঘট বিরোধী অবস্থান স্পষ্ট করেছিলেন মমতা ব্যানার্জি। এদিন তার থেকেও একধাপ এগিয়ে এদিন এফআইআর করার জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দিলেন মমতা ব্যানার্জি। ধর্মঘটের দু’দিন সরকারি দপ্তরে গরহাজির হলে তাকে ‘অবৈধ অনুপস্থিতি’ ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার। প্রথম দিনেই রাজ্যের বিভিন্ন দপ্তরে অনুপস্থিত কর্মচারীদের শো কজ পর্যন্ত করা শুরু করে দিয়েছে সরকারি আধিকারিকরা।

সুত্রঃ- গণশক্তি