শনিবার বিধাননগর এবং চন্দননগর পৌর কর্পোরেশনে নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন বামফ্রন্ট প্রার্থীরা। বিধাননগরের করুণাময়ী থেকে বামফ্রন্ট কর্মী সমর্থকরা মিছিল করে বিধাননগর মহকুমা শাসকের দপ্তরের সামনে যান এবং সেখানে বামফ্রন্ট প্রার্থীরা মনোনয়ন জমা দেন। এদিনের মিছিলে পলাশ দাশ, রমলা চক্রবর্তী, বলাই চ্যাটার্জি, প্রণব ব্যানার্জি, শুভজিৎ দাশগুপ্ত প্রমুখ বামফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অন্যদিকে, চন্দননগর শহরের তিন প্রান্ত থেকে মিছিল করে মহকুমা শাসকের দপ্তরের সামনে গিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন সংযুক্ত নাগরিক কমিটি মনোনীত বামপন্থী প্রার্থীরা। একটি মিছিল চন্দননগর স্টেশন থেকে শুরু হয় ও অপর দু’টি মিছিল বিদ্যালঙ্কার ও লিচুতলা থেকে শুরু হয়ে বাগবাজার হয়ে কোর্ট মোড়ে শেষ হয়। মিছিলে নেতৃত্ব দেন সিপিআই(এম) হুগলী জেলা কমিটির সম্পাদক দেবব্রত ঘোষ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মিতালি কুমার, রেবতী সাহা, পিনাকি চক্রবর্তী, আব্দুল হাই, মোনদীপ ঘোষ, সৌমিত্র চক্রবর্তী, অরিন্দম ভট্টাচার্য প্রমুখ নেতৃবৃন্দ। স্বচ্ছ প্রশাসন ও স্থায়ী পৌর বোর্ডে দাবি ওঠে চন্দননগরের মিছিল থেকে। বিদায়ী পৌর বোর্ডের দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্লোগান তোলেন বামফ্রন্টের কর্মীরা। ২০১৫ সালের পৌর নির্বাচনের পর আড়াই বছরের মাথায় পৌরবোর্ড ভেঙে দেওয়া হয়। সরকারি আধিকারিক ও শাসক দলের কাউন্সিলর, বিধায়ককে নিয়ে এতদিন চলেছে পৌরসভার কাজ। কাউন্সিলর না থাকায় সাধারণ মানুষকে সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়েছে নিত্যদিন। পৌর এলাকার বাসিন্দাদের যে কোনও দরকারে যেতে হতো বিধায়কের কাছে। সিপিআই(এম) হুগলী জেলা কমিটির সদস্য পিনাকি চক্রবর্তী বললেন, দু’জন প্রার্থী বাদে বাকি সবার মনোনয়ন আজ জমা দেওয়া হয়েছে। পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডে গোপাল শুক্লা ও এগারো নম্বর ওয়ার্ডে মহম্মদ মেহবুব আলম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। গত পৌরনির্বাচনে তৃণমূল বোর্ড গঠন করেও দুর্নীতি ও নিজেদের মধ্যে মারামারিতে লিপ্ত থাকায় আড়াই বছরের মধ্যে সেই বোর্ড ভেঙে যায়। জনপ্রতিনিধি শূন্য পৌরবোর্ডে প্রশাসক বসিয়ে কাজ চালানো হচ্ছিল। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার অস্বীকার করা হয়েছে। এবার মানুষ যদি নিজেদের গণতন্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করতে পারেন তাহলে বামপন্থীদের জয় নিশ্চিত। বিধাননগর পৌর কর্পোরেশনের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বামফ্রন্টের বেশিরভাগ প্রার্থীই শনিবার মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। শনিবার বিধাননগরের করুণাময়ী থেকে মিছিলে হাঁটতে হাঁটতে বামফ্রন্ট প্রার্থীরা জানালেন, বিধাননগরের বিদায়ী পৌরবোর্ড গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে, মানুষের মতামতকে উপেক্ষা করে উন্নয়নের নামে বিপুল অর্থের অপচয় করেছে। ৩২নম্বর ওয়ার্ডের মহিলা প্রার্থী সুকান্তা ব্যানার্জি বললেন, মানুষ ভোট দিতে পারলে তৃণমূল পর্যুদস্ত হবেই। প্রার্থী রাধনাথ চাঁদ, বাসব বসাকরা জানালেন, সল্টলেক গঠিত হওয়ার পর থেকে সল্টলেকের সামাজিক পরিস্থিতির এমন বেহাল দশা আগে কখনো দেখা যায়নি। বিদায়ী বোর্ডের বিরোধী দলনেতা মহসিন আহমেদ তৃণমূলের বোর্ডের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগও করেছেন। উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যে বিধাননগর পৌরনিগম অঞ্চলে কোভিড এবং ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনার সংখ্যা লক্ষণীয় রকমের বেশি। তেমনই পৌর কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাও। এরমধ্যেই মানুষ দেখেছেন, রাজারহাট থেকে সল্টলেকে রেড ভলান্টিয়ারদের জীবন বাজি রেখে মানুষের পাশে থেকে কাজ করতে। শাসকদলের কর্মীদের বেশির ভাগ অঞ্চলে তখন দেখাই মেলেনি। বিধাননগর পৌরনিগমের মোট ৪১টা ওয়ার্ড। রাজারহাটের গাঁতি থেকে সল্টলেকের কুলিপাড়া পর্যন্ত বিস্তৃত। তৃণমূলের সময়কালে প্রসাধনী কিছু উন্নয়নই কেবল হয়েছে। মানুষ তৃণমূলের নেতানেত্রীদের ব্যক্তিগত উন্নয়ন বেশি দেখতে পেয়েছেন। ভিআইপি রোডের অবস্থা বেহাল হয়েছে। কেষ্টপুর, বাগজলা খালের অবস্থা শোচনীয়। সল্টলেক ও রাজারহাটের যেসব জায়গায় কোনদিন জল জমার সম্যসা ছিল না সেসব অঞ্চলেও সামান্য বৃষ্টিতে জল জমতে দেখা গেছে। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, অসামাজিক, অনৈতিক কাজের রমরমা হয়েছে ভিআইপি রোড পার্শ্বস্থ অঞ্চল ও সল্টলেকে। শাসকদলের প্রশ্রয়ে ও প্রত্যক্ষ মদতে বেআইনি নির্মাণ, জলাজমি ভরাট হয়েছে। আর এসব নিয়ে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে খুন, মারামারির ঘটনায় মানুষের আতঙ্ক বেড়েই চলেছে। পরিস্রুত পানীয় জল নিয়ে পৌরনিগমজুড়ে বহু অভিযোগ। দেশবন্ধুনগর, নারায়ণপুর পৌর হাসপাতাল থেকে বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে পরিষেবা নিয়ে মানুষের তিক্ত অভিজ্ঞতা। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ভিআইপি রোডের ধারে ও সল্টলেকে একাধিক বেসরকারি হাসপাতালের রমরমা হয়েছে। উন্নয়ন নিয়ে কথা বলার অধিকার নেই মানুষের। ওয়ার্ড কমিটি, নাগরিক কমিটিকে নস্যাৎ করে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনে এসবের জবাব দিতেই প্রস্তুত হচ্ছেন বিধাননগরের বাসিন্দারা।

source- Ganashakti