ঠিকা-সেনা নিয়োগের প্রকল্প বাতিলের দাবি ক্রমশ জোরালো হচ্ছে দেশে। অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসার থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এই প্রকল্পের বিরোধিতার পাশাপাশি দেশের সুরক্ষা ও সন্ত্রাসবাদ দমনের ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের সদিচ্ছা নিয়েই গুরুতর প্রশ্ন তুলেছেন। বৃহস্পতিবার সেই ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্প বাতিলের দাবি জানিয়েছে সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো। এক বিবৃতিতে পলিট ব্যুরো স্পষ্টই বলেছে, এই প্রকল্প দেশের স্বার্থের পক্ষে ক্ষতিকর। একারণেই প্রকল্পটি বাতিল করে সশস্ত্র বাহিনীতে অবিলম্বে স্থায়ী নিয়োগ চালু করার দাবি জানিয়েছে। এরই পাশাপাশি এসএফআই এবং ডিওয়াইএফআই অগ্নিপথ বাতিলের দাবিতে আগামী ১৮, ১৯ এবং ২০ তারিখ দেশজুড়ে প্রতিবাদ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে।

‘পেশাদার সশস্ত্র বাহিনীতে কখনোই চার বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক সেনা নিয়োগ করা যায় না।’ পলিট ব্যুরোর বিবৃতিতে একথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, পেনশনের অর্থ বাঁচানোর জন্যই এই প্রকল্প চালু করা হচ্ছে দেশের পেশাদার সশস্ত্র বাহিনীর মান এবং দক্ষতার সঙ্গে ভয়ানক রকমের আপস করে। গত দু’বছরে এমনিতেই ভারতীয় সেনাবাহিনীতে কোনও নিয়োগ হয়নি। সশস্ত্র বাহিনীতে স্থায়ী সেনা নিয়োগের বদলে এই প্রকল্পের মধ্যে দিয়ে ঠিকা-সেনা নিয়োগের ব্যবস্থা করা হচ্ছে যাঁদের আবার চার বছরের পর কর্মসংস্থানের কোনও ভবিষ্যৎই নেই। ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি হতে পারে যদি এঁরা চার বছর পর ভাড়াটে সেনা হিসাবে কাজ আরম্ভ করে। আমাদের সামাজিক কাঠামো বা বুননের ওপর এর মারাত্মক প্রভাব পড়বে যা ইতিমধ্যেই যথেষ্ট টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে।

পলিট ব্যুরো প্রকল্পের স্বল্প মেয়াদি নিয়োগের কথা উল্লেখ করে বলেছে, চাকরির নিরাপত্তার ন্যূনতম সুরক্ষার ব্যবস্থা ছাড়াই যুবকদের দেশের জন্য চূড়ান্ত আত্মত্যাগের আহ্বান জানানো অপরাধ ছাড়া কিছু নয়। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদের মধ্যে দিয়ে এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে তাঁদের ক্ষোভই প্রতিফলিত হচ্ছে। একারণেই এই প্রকল্প বাতিল করে অবিলম্বে স্থায়ী সেনা নিয়োগের দাবি জানিয়েছে সিপিআই(এম)।

সিপিআই’র সাধারণ সম্পাদক ডি রাজা এদিন এক টুইট বার্তায় বলেছেন, মোদীর আমলে চাকরির সন্ধান করা বস্তুত ‘আগুনের ওপর দিয়ে হাঁটা’ ছাড়া কিছু নয়। অগ্নিপথ প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার কার্যত প্রতারাণা করছে যুবসমাজের সঙ্গে। দেশের সামরিক বাহিনীকে চুক্তিভিত্তিক করে তোলার পাশাপাশি যুবসমাজের ভবিষ্যৎকেই চরম অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিতে চাইছে।

দেশের বিভিন্ন রাজ্যে অগ্নিপথ প্রকল্পের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ পাচ্ছে। প্রতিবাদ-বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন তরুণরাই। আগামী দিনে এই প্রতিবাদ আরও বড় আকার নেবে বলেই মনে করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে আগামী ১৮, ১৯ এবং ২০ তারিখ গোটা দেশে অগ্নিপথ-এর বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে এসএফআই-ডিওয়াইএফআই। ‘অগ্নিপথ বাতিল করো’, ‘দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করো’—এই দুই স্লোগানকে সামনে রেখেই আন্দোলনের ডাক দেওয়া হয়েছে। এদিন দুই সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এক বিবৃতিতে অগ্নিপথ-এর পরবর্তী প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, এর ফলে প্রতি বছর ছাঁটাই হওয়া ‘অগ্নিবীর’রা অন্য কাজের জন্য ঝাঁপাবেন, সমাজের সামরিকীকরণ ঘটবে, কাজের নিরাপত্তা এবং আর্থিক স্থায়িত্ব লোপ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাহিনীর নৈতিকতা এবং পেশাদারিত্ব ধাক্কা খাবে।

জাতীয় স্বার্থেই অগ্নিপথ বাতিলের বাতিলের দাবি জানিয়েছে সিআইটিইউ। এদিন সংগঠনের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দেশের অন্যান্য শিল্পক্ষেত্র বা সরকারি দপ্তরে ঠিকা কর্মী নিয়োগের মতোই ঠিকা সেনা নিয়োগে উদ্যোগী হয়েছে কেন্দ্র। পেনশন দেবে না বলে এই ব্যবস্থা। অথচ ভয়ঙ্কর পরিণতির কথা একবারও ভাবা হচ্ছে না। ‘দেশের জওয়ানদের’ প্রতি মোদী সরকারের দ্বিচারিতাই এতে আরও প্রকাশ হয়ে গিয়েছে। এরা প্রকৃত অর্থে মেকি জাতীয়তাবাদ এবং ভুয়ো দেশপ্রেমের বুলি আওড়ায়। এই প্রকল্প শুধু জাতীয় স্বার্থই নয় দেশের সমাজের ওপরেও মারাত্মক প্রভাব পড়বে বলে মনে করে সিআইটিইউ। এরই সঙ্গে এই প্রকল্পের বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে প্রতিবাদ-আন্দোলনকে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি এই ধরনের দেশবিরোধী পদক্ষেপের বিরুদ্ধে দেশের দেশপ্রেমিক জনগণকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সিআইটিইউ।

অগ্নিপথ প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, আপনি দেশের বেকার যুবকদের কথা শুনুন। ‘অগ্নিপথ’-এর নামে ওঁদের ধৈর্যের অগ্নিপরীক্ষা নেবেন না। প্রকল্প সম্পর্কে কটাক্ষ করে বলেছেন, কোনও পদ নেই, কোনও পেনশন নেই, কোনও সরাসরি নিয়োগ নেই দু’বছর, চার বছর পর স্থায়ী ভবিষ্যৎও নেই, সৈন্যদের প্রতি সরকারের কোনও শ্রদ্ধাবোধও নেই।

এদিন অগ্নিপথ প্রকল্পের কড়া সমালোচনা করে কংগ্রেস বলেছে, টাকার জন্য দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিতেও পিছপা নয় সরকার। এদিন এক যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনে দলের চার নেতা বলেছেন, এর ফলে বহুবিধ ঝুঁকির মুখোমুখি হতে হবে। শুধু তাই নয়, সশস্ত্র বাহিনীর ঐতিহ্য, পরম্পরা এবং নৈতিকতাকেই অবমাননা করা হচ্ছে।

রাহুলের মতোই সমাজবাদী পার্টি প্রধান অখিলেশ সিং যাদব, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং বিএসপি নেত্রী মায়াবতী অগ্নিপথ প্রকল্প নিয়ে সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। অখিলেশ মনে করেন এই প্রকল্প দেশের ভবিষ্যৎ এবং যুবসমাজের পক্ষে সর্বনাশ হয়ে দেখা দেবে। কেজরিওয়াল দেশজুড়ে বিক্ষোভের কথা উল্লেখ করে বলেছেন, যুবসমাজ চার বছরের জন্য স্থায়ী চাকরি জন্য ক্ষোভ জানাচ্ছে। ওঁরা সারাজীবনই দেশের সেবা করতে চায়, চার বছর নয়।

সুত্রঃ- গণশক্তি