সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আপসের কোনও জায়গা নেই, কেরালার এলডিএফ সরকারের মতো দৃঢ় প্রত্যয়ে লড়াই করতে হবে আরএসএস-বিজেপি’র প্রতিটি সাম্প্রদায়িক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার কান্নুরে সিপিআই(এম)’র ২৩তম কংগ্রেস উপলক্ষে অনুষ্ঠিত একটি সেমিনারে পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য প্রকাশ কারাত একথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আধা লড়াইয়ের কোনও জায়গা নেই। জনপ্রিয়তা চলে যাওয়ার ভয়ে সাম্প্রদায়িক পদক্ষেপে সায় দিয়ে দিলে বিজেপি’র বিরুদ্ধে লড়াই হয় না। কেরালার এলডিএফ সরকার নাগরিকত্ব আইন পরিবর্তনের বিরুদ্ধে বিধানসভায় সবার আগে প্রস্তাব পেশ করে দেখিয়ে দিয়েছে দৃঢ় অবস্থান কীভাবে নিতে হয়। বামপন্থীদেরই সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আপসহীন সংগ্রামের পথ দেখাতে হবে।

পার্টি কংগ্রেস উপলক্ষে কান্নুর শহরের টাউন স্কোয়ারে একগুচ্ছ সেমিনারের আয়োজন করেছে সিপিআই(এম)। সাম্প্রদায়িকতার বিপদ সম্পর্কে সেমিনারটি বৃহস্পতিবার উদ্বোধন করেন প্রকাশ কারাত। এছাড়াও সেমিনারে অংশ নেন সিপিআই’র সাধারণ সম্পাদক ডি রাজা, সিপিআই(এম)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইপি জয়রাজন। সেমিনারে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল কংগ্রেস সাংসদ শশী থারুরকে। কিন্তু এআইসিসি নিষেধ করায় তিনি সেমিনারে যোগ দিতে পারেননি।

কারাত তাঁর ভাষণের শুরুতেই এই প্রসঙ্গ উত্থাপন করে বলেছেন, শশী থারুরের না আসার সিদ্ধান্ত আমাদের হতাশ করছে। থারুর নিজেই জানিয়েছেন, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আলোচনার বিষয়বস্তু গুরুত্বপূর্ণ এবং কংগ্রেস ও সিপিআই(এম)’র মধ্যে এই নিয়ে কোনও ফারাক নেই। এটাই লক্ষণীয়। একদিকে বিজেপি বিরোধী সব দলই বলছে যে তারা ধর্মনিরপেক্ষতা ও গণতন্ত্রের পক্ষে এবং তা রক্ষায় সবার ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। অথচ সেই বিষয়ে আলোচনায় যোগ দিতে নিষেধ করছে। আমাদের এর ব্যাখ্যার কোনও প্রয়োজন নেই, কংগ্রেস নিজেদের কাছেই ব্যাখ্যা দিক। আমার মনে হয়, কংগ্রেসের এই সিদ্ধান্ত সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী লড়াইতে কংগ্রেসের বিশ্বাসযোগ্যতা এবং ভাবমূর্তির আরও ক্ষয় ঘটাবে। 

তিনি একথাও বলেন, গুজরাটে স্কুলে গীতা পড়ানোর সরকারি সিদ্ধান্তে কংগ্রেস সায় দিয়েছে জনপ্রিয়তা ক্ষুণ্ণ হওয়ার ভয়ে। মধ্য প্রদেশের স্কুলে ধর্মীয় শিক্ষার বিরুদ্ধেও তারা দৃঢ় অবস্থান নিতে পারেনি। এমন নরম অবস্থান নিয়ে সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই করা যায় না। 

কেন্দ্রের সরকারে বিজেপি আসার পর থেকে কীভাবে সংবিধানের নির্দেশিত ধর্মনিরপেক্ষতা লঙ্ঘন করছে তার ব্যাখ্যা করে কারাত বলেছেন, আমাদের রাষ্ট্রের কোনও ধর্ম নেই, আমাদের সংবিধানের মূলে রয়েছে ধর্ম নির্বিশেষে সব নাগরিকদের সম দৃষ্টিতে দেখার নির্দেশ। কিন্তু আরএসএস’এর হিন্দুরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যপূরণের জন্য বিজেপি রাষ্ট্রক্ষমতার ব্যবহার করে একের পর এক এমন সব আইন করছে যা সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার মূল নীতির বিরোধী। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিতে সরকার এমন আইন তৈরি করছে যা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নাগরিকদের সম অধিকারকে খর্ব করছে। কর্ণাটকে ধর্মান্তরকরণ বিরোধী, ভিন্ন ধর্মে বিবাহ বিরোধী, সংখ্যালঘুদের ধর্মবিশ্বাস প্রচারের অধিকার বিরোধী, হিজাব বিরোধী আইন করা হয়েছে। যে অধিকার সংখ্যাগুরু ধর্মাবলম্বীদের রয়েছে তা সংখ্যালঘু ধর্মাবলম্বীদের থেকে কেড়ে নিয়ে সেগুলিকে ‘অপরাধ’ হিসাবে ঘোষণা করলে নাগরিকদের সম অধিকার থাকবে কী করে! ভারতের প্রায় অর্ধেক রাজ্যে এমন আইনি পদক্ষেপে সংখ্যালঘুদের অধিকার কাড়া হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকার নিজেই সিএএ করে সংখ্যালঘুদের নাগরিক অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। 

আইনি আক্রমণের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী মোদী যেভাবে সরকারি অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় অর্থের ব্যবহার করে একটি নির্দিষ্ট ধর্মের পৃষ্ঠপোষকতায় ব্যয় করছেন তাকেও সাম্প্রদায়িক কর্মসূচি হিসাবে চিহ্নিত করে কারাত বলেছেন, কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরে সরকারি খরচে অনুষ্ঠানের মানে রাষ্ট্র ও ধর্মকে বিচ্ছিন্ন করার সাংবিধানিক নির্দেশ অগ্রাহ্য করা। একদিকে সরকারের তরফে এভাবে একটি ধর্মের নাগরিকদের অধিকার হরণ করা হচ্ছে এবং একটি ধর্মকে পৃষ্ঠপোষকতা করা হচ্ছে। অন্যদিকে রাস্তায় সংখ্যালঘুদের ওপরে আক্রমণ নামিয়ে আনা হচ্ছে। বিজেপি শাসিত অনেক রাজ্যের হিন্দুপ্রধান এলাকায় মুসলিমদের ব্যবসা করার, অটো চালানো নিষিদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এভাবে হিন্দু ও মুসলিমদের মধ্যে সামাজিক সংযোগ ছিঁড়ে ফেলা হচ্ছে।

সেমিনারে ডি রাজাও বলেছেন, আমাদের দেশের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান তৈরি হয়েছে দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের পরিপ্রেক্ষিতে, দেশের জাতি ধর্ম ভাষার বৈচিত্রকে মর্যাদা দিয়ে। এখন বিজেপি সরকার যেভাবে সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতাকে ভাঙছে তাতে গণতান্ত্রিক ভারতের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে যাবে। 

সুত্রঃ গণশক্তি