এবার মোদীর ডাবল-সেঞ্চুরি। মোদী-আমলে পেট্রোল আগেই সেঞ্চুরি পার করেছিল। এবার সেই পথেই লিটার পিছু ১০০ টাকার গণ্ডি পার করল ডিজেলও। এই প্রথম এদেশে পেট্রোল, ডিজেল দুটোই একশো ছাড়িয়ে গেল। 

শনিবার তেল কোম্পানিগুলির ঘোষিত মূল্যে নতুন করে দাম বাড়ায়  রাজস্থানের শ্রীগঙ্গানগরে ডিজেলের দাম লিটারে ১০০টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ভারত-পাক সীমান্তের ওই জেলায় পেট্রোলের দাম আগেই ১০০ পেরিয়েছিল। রাষ্ট্রায়ত্ত তেল কোম্পানিগুলির হিসাবে এদিন পেট্রোলে দাম বেড়েছে ২৭ পয়সা, আর ডিজেলে ২৩পয়সা। গত ৪ মে থেকে লগাতার ২৩দিন দাম বেড়ে এদিন কর্ণাটকেও পেট্রোলের দাম একশো ছুঁয়ে ফেলেছে। এর ফলে করণাটক হলো দেশের সপ্তম রাজ্য যেখানে পেট্রোল ১০০টাকার বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। 

গত বছর লকডাউন ওঠার পর যখন আকাশ ছোঁয়া হচ্ছিল তখনই পেট্রোলের দাম একশো পেরিয়েছিল। এবার ফেব্রুয়ারি থেকে আবার দাম বাড়তে শুরু করে। কিন্তু মাঝে পশ্চিমবঙ্গ সহ ৫ রাজ্যের বিধানসভা ভোটের সময় দাম বেশ কিছুদিন এক জায়গায় আটকে ছিল। মাঝে দু’দিন কমেওছিল। কিন্তু, ভোট মিটতেই ফের চড়তে শুরু করে জ্বালানির দাম। গত একমাসের মধ্যে ২৩ দিন দাম বেড়েছে পেট্রোল-ডিজেলের। প্রায় প্রতিদিনই একটু একটু করে বাড়ায় এই সময় কালে পেট্রোল লিটারে ৫টাকা ৭২ পয়সা দাম বেড়েছে। তেমনই ডিজেল দামী হয়েছে আরো ৬ টাকা ২৫ পয়সা। দেশজুড়ে বিভিন্ন রাজ্যে লকডাউন চলায় তেলের চাহিদা কম হওয়া সত্ত্বেও দাম কিন্তু চড়েই যাচ্ছে।

পেট্রোপণ্যের দামের সিংহভাগই মূলত কেন্দ্র ও রাজ্যের করের বোঝা। দুই করের হিসাবে দেখা যায় পেট্রোলের ক্ষেত্রে এই করের বোঝা ৬০ শতাংশ আর ডিজেলে ৫৪ শতাংশ। এর মধ্যে অর্ধেকের বেশিটাই কেন্দ্রের কর। মোদী আমলে সেই করের বোঝা লাগাতার বাড়ানোই হয়েছে। দেশে পেট্রোলে কেন্দ্রীয় শুল্ক সাত বছরে বেড়েছে লিটারে ২৩.৭৮ টাকা। শতাংশের হিসাবে ২৫৮শতাংশ। তেমনই ডিজেলে মোদী জমানায় উৎপাদন শুল্ক লিটার পিছু বেড়েছে ২৮ টাকা ৩৭ পয়সা, অর্থাৎ ৮২০ শতাংশ। কেন্দ্রের হিসাবেই, গত সাত বছরে পেট্রোপণ্যে কর বাবদ কেন্দ্র আদায় করেছে ২২ লক্ষ কোটি টাকা। শুধু করোনা মহামারীর সময়েই আদায় হয়েছে ২.৭৪ লক্ষ কোটি। বারবারই এই কর কমিয়ে মানুষকে সুরাহার দাবি উঠছে বিরোধীদের তরফে। 

পেট্রোল ডিজেলের এই লাগামছাড়া মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে মানুষের মধ্যে। পেট্রোল ডিজেলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দামও। বামপন্থী দলগুলি, কংগ্রেস সহ বিরোধীরা ইতিমধ্যেই এই নিয়ে প্রতিবাদ আন্দোলন শুরু করেছে। সামনে সংসদের বাদল অধিবেশনে পেট্রোল-ডিজেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে উত্তাল হবে সংসদ। 

বিজেপি অবশ্য এসবে কর্ণপাত করতে নারাজ। দাম নিয়ে তারা আন্তর্জাতিক বাজারের অপরিশোধিত তেলের দামের অজুহাত সামনে আনছে। তবে যখন আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমছিল, তখন কেন দেশের বাহজারে দাম বাড়ছিল, সে প্রশ্নের কোনও জবাব মিলছে না বিজেপি নেতাদের কাছ থেকে। তারা এখন রাজ্যগুলির ভ্যাট কমানো উচিত বলে নীতিবাক্য আওড়াচ্ছে।

এদিন দিল্লিতে পেট্রোলের দাম সর্বকালীন রেকর্ড গড়ে হয়েছে লিটারে ৯৬ টাকা ১২ পয়সা, আর ডিজেল ছিল ৮৬ টাকা ৯৮ পয়সা। কলকাতায় পেট্রোল এদিন বিক্রি হয়েছে ৯৬ টাকা ৬ পয়সায়। আর ডিজেল ৮৯ টাকা ৮৩ পয়সা। মুম্বাইতে লিটার পিছু পেট্রোলের দাম ১০২.৩৬ টাকা। লিটার পিছু ডিজেলের দাম ৮৬.৯৮ টাকা। দেশের মেট্রো শহরগুলির মধ্যে একমাত্র মুম্বাইতেই পেট্রোলের দাম ১০০-র গণ্ডি পার করেছে। তবে যে হারে তেলের দাম বাড়ছে, তাতে শীঘ্রই হয়তো ডিজেলেও মুম্বাই সেই তালিকায় ঢুকে পড়বে। এদিন সেখানে ডিজেলের দাম ছিল লিটার পিছু ৯৪ টাকা ৩৯ পয়সা।

জ্বালানির এই দাম রাজ্যে রাজ্যে বদলের যাওয়ার পিছনে ভ্যাটের মতো স্থানীয় কর এবং পরিবহণ খরচ থাকে। ইতিমধ্যেই দামের এই উর্ধ্বগতিতে ছয় রাজ্য ও এক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল – রাজস্থান, মধ্য প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্র প্রদেশ, তেলেঙ্গানা ও লাদাখে লিটারে ১০০টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছিল পেট্রোলের দাম। এদিন নতুন করে ২৭ পয়সা দাম বাড়ায় কর্ণাটক ঢুকে পড়ল এই ‘হান্ড্রেড ক্লাবে’। ওই রাজ্যের বিদার, বেলারি, কোপ্পাল, দেবনগরী, শিমোগা ও চাকমাণঙ্গালুরে পেট্রোল শনিবার বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকার বেশিতে। রাজধানী বেঙ্গালুরুতেও পেট্রোল ১০০ ছোঁয়ার মুখে। এদিন সেখানে পেট্রোল ছিল ৯৯টাকা ৩৯ পয়সা আর ডিজেল ছিল ৯২ টাকা ২৭ পয়সা। 

ভারত-পাক সীমান্তের শ্রীগঙ্গানগরে মাঝ-ফেব্রুয়ারিতেই পেট্রোল ১০০ টাকা ছুঁয়েছিল। এদিন ডিজেলও সেই গণ্ডি পেরিয়েছে। শনিবার সেখানে পেট্রোলের দাম ছিল লিটারে ১০৭ টাকা ২৩ পয়সা। আর ডিজেল ছিল ১০০টাকা ৬ পয়সা। দেশে পেট্রোল-ডিজেলের উপর সর্বোচ্চ ভ্যাট রাজস্থানে। তারপরই রয়েছে মধ্য প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্র প্রদেশ ও তেলেঙ্গানা। 

‘এই কোভিড বিপর্যয়ের মধ্যে মানুষকে সাহায্য করার বদলে, মোদী সরকার নির্মম মূল্যবৃদ্ধির মাধ্যমে জীবন-জীবিকার উপর নির্দয়ভাবে আক্রমণ নামিয়ে আনছে। গত ৪ মে থেকে ২৩ বার পেট্রোপণ্যের দাম বাড়ায় সমস্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষের দাম বেড়ে চলেছে। এখন চাই সমস্ত গরিম মানুষের জন্য সরাসরি আর্থিক সাহায্য আর বিনে পয়সার খাবার’।

Source- Ganashakti