বাংলার বৃহত্তর যুব সমাজের থেকে যুব আন্দোলনের কর্মীদের রাজনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করার যে চেষ্টা তৃণমূল সরকার করছে তার মোকাবিলা করে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সংযোগ প্রক্রিয়ায় জোর দিতে ডিওয়াইএফআই নেতৃবৃন্দকে পরামর্শ দিলেন ডিওয়াইএফআই’র প্রাক্তন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক এবং বর্তমানে সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেছেন, গত দশ-বারো বছর ধরে আক্রমণ চালিয়েও ওরা আপনাদের বৃহত্তর যুবসমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি, বিধাননগরে সংগঠনের সর্বভারতীয় সম্মেলনের সুযোগে সেই সংযোগকে আরও দৃঢ় করে তুলুন। 

১২ থেকে ১৫ মে ডিওয়াইএফআই’র একাদশ সর্বভারতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে চলেছে কলকাতা লাগোয়া বিধাননগরে। সম্মেলনের প্রস্তুতি পর্বকে উপযুক্তভাবে কাজে লাগাতে মঙ্গলবার কলকাতার দীনেশ মজুমদার ভবনে সর্বভারতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে ডিওয়াইএফআই’র প্রাক্তন এবং বর্তমান নেতৃবৃন্দ মিলিত হয়েছিলেন। সেখানে বর্তমান যুব নেতৃত্বকে নানা পরামর্শ দিয়েছেন ডিওয়াইএফআই’র প্রাক্তন নেতৃবৃন্দ। সভায় মহম্মদ সেলিম বলেন, ইতিহাসে ফেরা যায় না। কিন্তু ইতিহাসকে স্মরণ করতে হয়, তার থেকে শিক্ষা নিতে হয়। দক্ষিণপন্থী প্রতিক্রিয়াশীল শক্তিগুলি নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থে ইতিহাসকে নিজেদের মতো করে লিখতে চায়। এর প্রতিরোধ প্রয়োজন। মধ্য প্রাচ্যের একাধিক দেশের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, সেখানে একসময় সমাজতান্ত্রিক চিন্তাধারার বিকাশ ঘটেছিল, কিন্তু পরবর্তীকালে প্রতিক্রিয়াশীল সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলি সাধারণ মানুষের চেতনা থেকেই সেই অধ্যায়গুলিকে মুছে ফেলতে সক্ষম হয়েছে। এই কাজে রাষ্ট্রশক্তিকে ব্যবহার করা হয়েছে লাগামহীনভাবে। অপরদিকে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের ফলে এবং লাতিন আমেরিকার বহু দেশে নতুন করে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী বাম রাজনীতির উত্থানের ফলে সমাজতান্ত্রিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ চেতনা সমাজ থেকে হারিয়ে যায়নি। এরাজ্যের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রাসঙ্গিক। তৃণমূল সমাজ থেকে বামপন্থীদের প্রভাব এবং অবদান মুছে ফেলার চেষ্টা করেছে যাতে একটা প্রজন্ম পরে রাজ্যের বাম আন্দোলন বিস্মৃত হয়ে যায়। যুব আন্দোলনের কর্মীরা অনেকাংশে তা প্রতিরোধে সফল হয়েছেন। আরও বেশি করে ‘ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ’ প্রয়োজন। 

এর পাশাপাশি সেলিম বলেন, বর্তমান রাজনীতিতে টিকে থাকার জন্য ‘নেটওয়ার্ক’ এবং ‘নেটওয়ার্থ’ প্রয়োজন। অর্থাৎ জনসংযোগ রক্ষা করা এবং সেই সংযোগ ব্যবহার করে সংগঠন চালাতে প্রয়োজনীয় আর্থিক অনুদানের ব্যবস্থা করা। তৃণমূল এই দুই ক্ষেত্রেও আঘাত হেনেছে। কিন্তু ১১তম সর্বভারতীয় সম্মেলনের প্রস্তুতিকে সামনে রেখে ফের একবার নেটওয়ার্ক ঝালিয়ে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছেন রাজ্যের যুব নেতৃত্ব। যাঁরা একসময় যুব আন্দোলনের সঙ্গে কোনও না কোনও স্তরে যুক্ত ছিলেন, কিন্তু বর্তমানে সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে উঠতে পারেন না, তাঁদের প্রত্যেকের কাছে ফের একবার যেতে হবে, প্রাক্তনীদের সঙ্গেও নতুন করে যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে। ডেটাবেস তৈরি করতে হবে সেই সমস্ত প্রাক্তনীদের নিয়ে। একাজে সফল হলে আগামীদিনে যুব আন্দোলনের পাশাপাশি বামপন্থী রাজনীতিও লাভবান হবে। 

সভায় ডিওয়াইএফআই’র প্রাক্তন সর্বভারতীয় নেতা রবীন দেব বলেন, বিগত ১০-১২ বছর ধরে চরম প্রতিকূল পরিস্থিতে লড়াই চালাচ্ছেন এরাজ্যের যুব কর্মীরা। গোটা দেশ থেকে আসা প্রতিনিধিদের সামনে সেই লড়াইয়ের ছবি তুলে ধরতে হবে। সেই লক্ষ্যে প্রয়োজন অনুযায়ী সমাবেশ, সেমিনার ইত্যাদির আয়োজন করতে হবে। সারা রাজ্যে যুবদের মধ্যে এই সম্মেলনকে সামনে রেখে প্রচার চালাতে হবে। এর পাশাপাশি তিনি ডিওয়াইএফআই’র অতীত এবং বর্তমান নেতাকর্মীদের মেলবন্ধনের কথা বলেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যৎকে সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে প্রাক্তনীরাও বর্তমানের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। সম্মেলনকে সফল করে তুলতেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন প্রাক্তন যুব আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। এদিনের সভায় এছাড়াও বক্তব্য রাখেন আভাস রায়চৌধুরি, পলাশ দাস, বাদল দত্ত, অসিতাঙ্গ গাঙ্গুলি, আব্দুল হাই, অভিজিৎ অধিকারী, পল্লব পোদ্দার, মানব মুখার্জি, অপর্ণা ব্যানার্জি, প্রশান্ত দাস, প্রতীম ঘোষ, মীনাক্ষী মুখার্জি, জামির মোল্লা, তাপস সিনহা, শিশির গুপ্ত সহ প্রাক্তন এবং বর্তমান যুব নেতৃবৃন্দ।

সুত্রঃ- গণশক্তি