মোদী সরকারের বিরোধিতা করলেই কাউকে দেশদ্রোহী বা জাতীয়তা বিরোধী বলে দাগিয়ে দেওয়ার যে প্রবণতা বর্তমান ভারতের বৈশিষ্ট হয়ে উঠেছে, বুধবার সুপ্রিম কোর্টে তা বড় ধাক্কা খেল। জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে নিতে ২০১৯ সালে সংবিধানের ৩৭০ নম্বর ধারা বাতিল করেছিল মোদী সরকার। ওই পদক্ষেপের বিরোধিতা করায় জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও ন্যাশনাল কনফারেন্স দলের নেতা ফারুক আবদুল্লাকে দেশদ্রোহিতার দায়ে অভিযুক্ত করার আবেদন জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের হয়েছিল। সেই আবেদন বুধবার খারিজ করে দিল দুই বিচারপতি সঞ্জয় কিষান কাউল এবং হেমন্ত গুপ্তাকে নিয়ে গঠিত সর্বোচ্চ আদালতের বেঞ্চ। শুধু আবেদন খারিজই নয়, সুপ্রিম কোর্টের এ‍‌ই দুই বিচারপতির বেঞ্চ স্পষ্ট ভাষায় বলেছে, সরকারের মতামতের থেকে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করা মানে‍ই দেশদ্রোহিতা নয়। মামলার আবেদনকারীরা এমনই দাবি করায় সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ তাঁদের উপর ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও চাপিয়েছে। রজত শর্মা এবং ড. এন শ্রীবাস্তব নামে দুই ব্যক্তি দেশদ্রোহিতার অভিযোগে আবদুল্লার বিচার ও তাঁর সাংসদপদ খারিজের দাবি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করেছিলেন। তাঁরা বিশ্ব গুরু ইন্ডিয়া ভিশন অব সর্দার প্যাটেল নামে একটি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। সুপ্রিম কোর্টে পেশ করা আবেদনে তাঁরা অভিযোগ করেছিলেন, ৩৭০ নম্বর ধারাকে ফিরিয়ে আনার জন্য চীনের সাহায্য নেবেন বলে টিভিতে মন্তব্য করেছেন ফারুক আবদুল্লা। তিনি আসলে কাশ্মীরকে চীনের হাতে তুলে দিতে চান। স্পষ্টতই তাঁর এই বক্তব্য দেশদ্রোহিতার পর্যায়ে পড়ে, যা ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৪-ক নম্বর ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তাই দেশদ্রোহিতার অভিযোগে ফারুক আবদুল্লার বিচার হোক এবং তাঁকে সংসদ থেকে বরখাস্ত করা হোক। প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগে বিজেপি’র মুখপাত্র সম্বিত পাত্র এক সাংবাদিক সম্মেলনে আবদুল্লার বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ তুলেছিলেন। রজত শর্মা এবং ড. এন শ্রীবাস্তব সুপ্রিম কোর্টে পেশ করা আবেদনে তা উল্লেখও করেছিলেন। ন্যাশনাল কনফারেন্স সঙ্গে সঙ্গেই তা অস্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছিল। ওই বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ‘‘আমাদের নেতা কখনোই বলেননি যে, চীনের সাহায্যে সংবিধানের ৩৭০ নম্বর ধারা ফিরিয়ে আনা হবে। সম্বিত পাত্র ওই সাংবাদিক সম্মেলনে ফারুক আবদুল্লার আগের কিছু মন্তব্যও বেঠিকভাবে উল্লেখ করেছেন।’’ এদিন সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ অবশ্য আবদুল্লা ওই মন্তব্য করেছেন কি করেননি, সে বিষয়েই যায়নি। আবদুল্লাকে দেশদ্রোহিতার দায়ে অভিযুক্ত করার জন্য শর্মা ও শ্রীবাস্তবের আরজি খারিজ করে সরাসরিই বলেছে, সরকারের মতামতের থেকে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করলেই কাউকে দেশদ্রোহী বলা যায় না।

source- ganashakti