বিদ্যালয়ে চাকরির দেওয়ার নামে প্রতারণায় এবার নাম জড়ালো চাপড়ার তৃণমূল বিধায়ক রুকবানুর রহমানের। এর আগে শাসক দলের একাধিক বিধায়ক প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি দেওয়ার নামে টাকা তুলেছেন বলে অভিযোগ করেছেন খোদ তৃণমূলের কর্মী থেকে সাধারণ বেকার যুবরা। অভিযুক্ত বিধায়কদের বিরুদ্ধে কোনও একটি ব্যবস্থাও রাজ্যের শাসক দল নেয়নি। নদীয়ায় তৃণমূলের আরেক বিধায়ক তাপস সাহার নামেও একাধিক অভিযোগ উঠেছিল। এবার সেই তালিকায় নবতম সংযোজন রুকবানুর।  

চাপড়ার বৃত্তিহুদা পঞ্চায়েতের সদস্য জামশেদ আলি মণ্ডল সহ তিন জন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ও তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ব্যানার্জির কাছে রুকবানুরের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র পাঠিয়েছেন। অভিযোগে বলা হয়েছে, চাকরি দেওয়ার নামে একেক জনের কাছ থেকে চাপড়ার বিধায়ক রুকবানুর রহমান ৬ লক্ষ টাকা নিয়েছেন। জামশেদের বাবা বৃদ্ধ কাশেম আলি মণ্ডল বলেছেন, ‘‘জমি-জায়গা বেচে, মহাজনের কাছ থেকে ধার নিয়ে বিধায়কের অফিসে গিয়ে নিজে হাতে টাকা দিয়ে এসেছি। সেই টাকা গুনে নিয়েছিল চাপড়া ব্লকের তৃণমূলের নেতা শুকদেব ব্রহ্ম। বিধায়ক তো সবসময় আসেন না। অফিসের উপরের ঘরে থাকেন। নিচে বসে শুকদেব টাকা নিয়েছিল। এরপর কেটে গেছে বেশ কটা বছর। নোটবন্দি শুরু হওয়ার মাস তিনেক আগে সেই টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু ছেলের চাকরি হয়নি। এরপর সরাসরি বিধায়ক রুকবানুরের সঙ্গে দেখা করি। সে গায়ে হাত বুলিয়ে বলে, ‘কিছু দিন অপেক্ষা করো। চাকরি হবে কথা দিতে পারছি না। তবে চেষ্টা করব, না হলে টাকা ফিরিয়ে দেব।’ কিন্তু টাকা দেয়নি। এরপর বিধানসভা  ইলেকশনের সময় বলে, ‘এখন জ্বালিও না। পরে দেখছি।’ এরপর আর টাকা ফিরিয়ে দেয়নি। এখন বাড়িতে মহাজন এসে চাপ দিচ্ছে। সুদ এখন দ্বিগুন হয়েছে। সে টাকা  দিতে পারছি না। ২০১৬ সালে দিয়েছিলাম সে টাকা।’’ 

বিধায়কের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র ডাকযোগে রেজিস্ট্রি করে তৃণমূল ভবনে পাঠিয়েছেন জামশেদ। অভিযোগ, টাকা ফেরত চাইতে গেলে শুকদেব ব্রহ্মর লোকজন উলটে খুনের হুমকি দিচ্ছে ফোন করে। ভয়ে অনেকেই এখন এলাকা ছাড়া। গত ৬ জুলাই প্রতারিত চার জন একটি চিঠি লেখেন অভিষেক ব্যানার্জিকে। ফের এদিন মমতা ব্যানার্জি, অভিষেক ব্যানার্জি ও তৃণমূলের জেলা সভাপতি কল্লোল খাঁকে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন চাকরি পাওয়ার আশায় টাকা দিয়ে প্রতারিত বৃত্তিহুদা পঞ্চায়েতের পীতম্বরপুরের বাসিন্দা ৪ যুবক, যাঁরা তৃণমূলেরই কর্মী ।   

অভিযোগ অবশ্য সরাসরি উড়িয়ে দিয়েছেন চাপড়ার বিধায়ক রুকবানুর রহমান। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি জানতে পেরেছি, জামশেদ ওই টাকা দিয়েছিল চাপড়া পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য রেহান মোল্লাকে। ওসব ফালতু অভিযোগ। রাজনৈতিভাবে ফাঁসাতে এসব বলছে, যদিও আমার নাম করে তৃণমূলের অনেকেই টাকা তুলেছে। এমন অনেক অভিযোগ আমার কাছে আগে এসেছিল। টাকা তুলেছে একদা তৃণমূলের জেবের শেখ, রাজীব শেখ। কেউ বলছে শুকদেব ব্রহ্ম। তথ্য প্রমাণ কোনও দিতে পারব না ভাই। কিন্তু টাকা তোলা হয়েছে। অনেক দিন আগে আমার কাছে ওরা এসেছিল। ২০১৭ সাল নাগাদ। চাকরির জন্য টাকা দিয়েছে বলেছিল। তখন রেহান মোল্লার নাম বলেছিল। পরে শুকদেবের নাম বলছে। যাদের নামে টাকা তোলার অভিযোগ এসেছিল, ওদের ডেকে বলে দিয়েছিলাম, ভাই তোমরা কেউ টাকা নিয়ে থাকলে দিয়ে দাও। এসব কোরো না। জেবের শেখ একসময়ে আমাদের দলে থেকে কোটি কোটি টাকা তুলেছে। সে প্রমাণ সব আমাদের কাছে আছে।’’ 

চাপড়া ব্লক জুড়েও চাকরি দেওয়ার নাম করে তৃণমূলের ছোট-বড় নেতারা টাকা তুলেছেন বলে কার্যত মেনে নিয়েছেন বিধায়ক রুকবানুর রহমান। এখন সেই টাকা মেরে দিয়ে বসে আছে। টাকা মার গেলেও ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না অনেকেই। বিধায়ককে জানিয়েও ফল হয়নি কিছুই। তাই মুখ্যমন্ত্রীকে জানিয়েছেন টাকা ফেরতের আশায়। তবে ‘সে গুড়ে বালি’, বলছেন সবাই।

Source- Ganashakti